কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের অতিথি কক্ষে চার ঘণ্টা আটকে রেখে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
রোববার রাত সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় ৩টা পর্যন্ত ওই কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ছাত্রীর। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তার অভিযোগ, র্যাগিংয়ের নামে ছাত্রলীগ নেত্রীরা তাকে ‘বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ’ করেন। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি ঘটনা কাউকে জানালে ‘জীবননাশের হুমকিও’ দেন তারা।
রোববার রাতে ওই ঘটনার পর বিপর্যস্ত ওই ছাত্রী সকালে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান। মঙ্গলবার তিনি প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম বলেন, “র্যাগিংয়ের বিষয়টি আমি শুনেছি। র্যাগিংতো একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনও র্যাগিং ছিল না। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়গুলোকে অ্যালাউ করে না। সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে অংশ নিতে আগের দিন তিনি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ৩০৬ নম্বর কক্ষে পরিচিত এক ‘আপুর’ কক্ষে ‘গেস্ট’ হিসেবে ওঠেন। এরপর ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় তিনি র্যাগিংয়ের নামে ‘চরমভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের’ শিকার হন।
“তারা আমাকে বিবস্ত্র করে আমার ভিডিও ধারণ করে রাখেন। এমনকি তারা আমাকে জীবননাশেরও হুমকি দেন।”
অভিযোগে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্রী তাবাচ্ছুমসহ নাম না জানা আরও অন্তত ৭-৮ জন র্যাগিংয়ে অংশ নেন।
নির্যাতনের বিবরণে ওই ছাত্রী লিখেছেন, “আমার বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাবাচ্ছুম নামের এক আপু আমাকে দেখা করতে ডাকেন। কিন্তু আমি অসুস্থ থাকায় যথাসময়ে তার রুমে যেতে পারিনি। এরপর থেকেই তারা আমার উপর চড়াও হতে থাকে এবং তাদের রুমে গেলে আমার সাথে খারাপ আচরণ করেন, ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন এবং হল থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন।
“তারা অভিযোগ করতে থাকেন, তাদের না জানিয়ে কেন হলে উঠেছি। অথচ আমি আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে নয়, গেস্ট হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য উঠেছিলাম। এরপর রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টায় অন্তরা আপুসহ তার সাথে থাকা ৭-৮ জন আমাকে গণরুমে নিয়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পড় মারতে থাকে।
“আমাকে কেন মারছেন বলতে গেলে তারা আমার মুখ চেপে ধরে থাকেন এবং সজোরে চোয়ালে থাপ্পড় মারেন। আমাকে বলতে থাকেন, ‘আমরা কী করতে পারি জানিস তুই? আমাদের সম্পর্কে তোর কোন আইডিয়া আছে’?”
ভুক্তভোগী ছাত্রী লিখেছেন, “আমি কান্না করে তাদের পা ধরে মাফ চাইতে গেলে তারা আমাকে পা দিয়ে লাথি মারেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ধরে রাখেন। একটা ময়লা গ্লাস চেটে পরিষ্কার করিয়ে নেন। আমাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন।
“আমাকে বলতে থাকেন, যাতে এই বিষয়টা কোনোভাবে বাইরে না যায়, আর যদি বলি তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল করে দেবে। ভিডিওগুলো তাদের সংরক্ষণে আছে। এসময় অন্তরা বলেন,‘যদি তুই প্রশাসনের কাছে কোনো প্রকার অভিযোগ দিস তাহলে মেরে কুত্তা দিয়ে খাওয়াব।’ এরপর আমাকে রাত সাড়ে ৩টায় ছেড়ে দেয়। এ কারণে পরের দিন প্রাণের ভয়ে আমি ক্যাম্পাস ছেড়ে গ্রামের বাড়ি পাবনাতে চলে যাই।”
যার বিরুদ্ধে নির্যাতনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ, সেই সানজিদা চৌধুরী পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আমি যদি তাকে এসব করে থাকি, তাহলে সে প্রমাণ করুক। এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।”
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। খোঁজখবর নেওয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আর প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, “আমরা হল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
বিশ্ববিদ্যালয়েল ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক শেলীনা নাসরিন বলেন, “র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে বরাবরই আমাদের নীতি জিরো টলারেন্স। ওই ছাত্রীর বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন আজাদও বলেছেন দুই পক্ষের কথা শুনে বিষয়টি যাচাই বাছাই করে তারা ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নেবেন।