পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান লং মার্চ চলাকালে তাকে গুলি করে হত্যাচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ একজন মেজর জড়িত বলে যে অভিযোগ করেছেন, তা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
সশস্ত্র বাহিনীর গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখা ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান (ইমরান) সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এবং বিশেষ করে একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে ভিত্তিহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিযোগ করেছেন তা একেবারেরই মেনে নেওয়া যায়না।
খুবই পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা এবং সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসাবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আত্মগর্বিত। এ বাহিনীর অভ্যন্তরীন জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা খুবই কঠোর এবং কার্যকর। দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের কোনওরকম বেআইনি কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য।
কিন্তু উদ্ভট অভিযোগ তুলে বাহিনীর কারও মান-মর্যাদা কালিমালিপ্ত করা হলে সেনাবাহিনী তাদের কর্মকর্তা ও সেনাদের সুরক্ষা দেবে, তা যাই ঘটুক না কেন, বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান ২০১৮ সালে ভোটে জিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী সেনাবাহিনীর সমর্থন তখন তার দিকে থাকলেও কিছু দিন পর তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
সেনা সমর্থন হারানো ইমরানের বিরুদ্ধে এই বছরের শুরুতে জোট বেঁধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে দেশটির বড় দুই রাজনৈতিক দল। তাতে হেরে গত এপ্রিলে ইমরানের সরকারের পতন ঘটলে প্রধানমন্ত্রী হন মুসলিম লিগের শাহবাজ শরিফ, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই।
ক্ষমতা হারানো ইমরান নতুন নির্বাচনের দাবি তুলে পাকিস্তানে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ লংমার্চের ডাক দেন। গত ২৯ অক্টোবর লাহোর থেকে শুরু হয় এই কর্মসূচি।
রাজধানী ইসলামাবাদের পথে চার দিন পর বৃহস্পতিবার পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে সমাবেশের জন্য তৈরি হলে সেখানে হয় গুলিবর্ষণ।
সেখানে গুলিবিদ্ধ হন ইমরান খানও, তবে তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে পরে তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়। গুলির ঘটনায় একজন নিহতেরও খবর পাওয়া যায়। আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।
এই হামলার ঘটনায় তিনজনকে দায়ী করেন ইমরান। তারা হলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই র শীর্ষ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সাল।
‘দ্য ডন’ জানায়, সেনাবাহিনীর আইএসপিআর- এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সামরিক প্রতিষ্ঠান/কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ ছুড়ে দিয়েছেন ইমরান খান। এটি খুবই দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। অবাধে সেনাবাহিনী কিংবা এর সেনাসদস্যদের মানহানি কাউকে করতে দেওয়া হবে না।
এ বিষয়টি মাথায় রেখে পাকিস্তান সরকার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা এবং এই সামরিক প্রতিষ্ঠান/ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানি ও মিথ্যা অভিযোগের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করতে বলেছে বলে জানায় আইএসপিআর।