বৃষ্টির বেগ বাড়ছে, বুঝতে পারছিলেন মইন আলি। তাই চেষ্টায় ছিলেন ব্যবধান ঘুচানোর। গ্যারেথ ডেলানির ৩ বলে একটি করে ছক্কা ও চারে তুলে নিলেন ১২ রান। তবুও শেষ রক্ষা হলো না। ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে দারুণ এক জয় পেল আয়ারল্যান্ড। টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার হারিয়ে দিল ইংল্যান্ডকে।
মেলবোর্নে বুধবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভের বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের জয় ৫ রানে। ১৫৭ রান তাড়ায় ১৪.৩ ওভারে ইংল্যান্ডের রান যখন ৫ উইকেটে ১০৫, তখন নামে বৃষ্টি। এরপর আর খেলা সম্ভব হয়নি।
এক যুগ পর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হলো দুই দল। আগের দেখায়ও বাধা হয়ে এসেছিল বৃষ্টি। ২০১০ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডকে মাত্র ১২০ রানে থামিয়ে আয়ারল্যান্ড ৩.৩ ওভার খেলতেই বৃষ্টি নামলে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। এবার অন্তত ফল হতে পারল। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
অস্ট্রেলিয়া আসরে প্রাথমিক রাউন্ডে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ক্যারিবিয়ানদের উড়িয়ে দিয়ে বৈশ্বিক আসরের মূল পর্বে ওঠে আয়ারল্যান্ড। এবার তারা চমক দেখাল শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারিয়ে।
দারুণ এই জয়ের ভিতটা গড়ে দেন অ্যান্ডি বালবার্নি। ২ ছক্কা ও ৫ চারে ৪৭ বলে খেলা তার ৬২ রানের সুবাদেই দেড়শ ছাড়ানো সংগ্রহ পায় আইরিশরা। তাতে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তিনি।
টসের পর ও ম্যাচ শুরু হতেই দুই দফায় হানা দেয় বৃষ্টি। এরপর খেলা শুরু হলে তৃতীয় ওভারেই পল স্টার্লিংকে হারায় টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা আয়ারল্যান্ড।
চমৎকার ব্যাটিংয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন বালবার্নি ও লর্কান টাকার। ক্রিস ওকসকে ওভারে দুই চার মারেন টাকার। স্যাম কারানকে চারের পর ছক্কায় ওড়ান তিনি।
দুইজনের ব্যাটে পাওয়ার প্লেতে ৫৯ রান তোলে আয়ারল্যান্ড। ১০ ওভার শেষে দলটির রান ছিল ১ উইকেটে ৯২।
সেখান থেকে ২০০ রান করা আইরিশদের জন্য ছিল বেশ সম্ভব। কিন্তু দ্বাদশ ওভারে টাকারের বিদায়ে বদলে যায় ম্যাচের গতি। একের পর এক উইকেট হারিয়ে কোনোমতে দেড়শ পার করে তারা।
বালবার্নির শটে বোলার আদিল রশিদের আঙুল ছুঁয়ে বল নন-স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পে লেগে রান আউট হন টাকার। ফেরেন ১ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৪ রান করে। ভাঙে ৫৭ বল স্থায়ী ৮২ রানের জুটি। বিশ্বকাপে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আয়ারল্যান্ডের যা সর্বোচ্চ।
পরের ওভারে উডের ১৫৩ কিমি গতির বলে কট বিহাইন্ড হ্যারি টেক্টর। টানা দুই বলে বালবার্নি ও জর্জ ডকরেলকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান লিয়াম লিভিংস্টোন। বাকিরাও ছিলেন আসা-যাওয়ার মাঝে।
২৫ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে ৪ বল আগেই শেষ হয়ে যায় আইরিশদের ইনিংস।
ইংল্যান্ডের শুরুটাও হয় বাজে। দ্বিতীয় বলেই হারায় তারা জস বাটলারকে। তৃতীয় ওভারে বিদায় নেন অ্যালেক্স হেলস। দুই ওপেনারই জশ লিটলের শিকার। ফিওন হ্যান্ডের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে দ্রুত ফেরেন বেন স্টোকসও।
২৯ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে কিছুক্ষণ টানেন হ্যারি ব্রুক ও দাভিদ মালান। কিন্তু দুইজনেই ধুঁকছিলেন টাইমিং করতে। একাদশ ওভারে ডকরেলের পরপর দুই বলে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান ব্রুক ও মালান। দুই বল পর অবশ্য ফেরেন ব্রুক।
ব্যারি ম্যাককার্থির বলে থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় মালানের ২ চারে ৩৭ বলে খেলা ৩৫ রানের ইনিংস। এরপর মইন আলি দ্রুত রান তোলায় মনোযোগ দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি নামলে ভেস্তে যায় তাদের জয়ের আশা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড: ১৯.২ ওভারে ১৫৭ (স্টার্লিং ১৪, বালবার্নি ৬২, টাকার ৩৪, টেক্টর ০, ক্যাম্পার ১৮, ডকরেল ০, ডেলানি ১২*, অ্যাডায়ার ৪, ম্যাককার্থি ৩, হ্যান্ড ১, লিটল ০; স্টোকস ২.২-০৮-১, ওকস ৩-০-৪১-০, উড ৪-০-৩৪-৩, কারান ৩-০-৩১-২, রশিদ ৪-০-২৪-০, লিভিংস্টোন ৩-০-১৭-৩)
ইংল্যান্ড: ১৪.৩ ওভারে ১০৫/৫ (বাটলার ০, হেলস ৭, মালান ৩৫, স্টোকস ৬, ব্রুক ১৮, মইন ২৪*, লিভিংস্টোন ১*; লিটল ৩-০-১৬-২, অ্যাডায়ার ২-০-১০-০, ম্যাককার্থি ৩-০-২০-১, হ্যান্ড ২-০-১৭-১, ডেলানি ৩.৩-০-৩৩-০, ডকরেল ১-০-৫-১)
ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস ও স্টার্ন পদ্ধতিতে আয়ারল্যান্ড ৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: অ্যান্ডি বালবার্নি