আর্জেন্টিনার হয়ে প্রতিটি ম্যাচই তার জন্য এক-একটি পরীক্ষা। একটিতে পাস করলে আসে আরেক ম্যাচ, মানে ফের বসতে হয় পরীক্ষার টেবিলে। এভাবে চলতেই থাকে বিরামহীনভাবে। যথারীতি কাতার বিশ্বকাপেও তা চলছে। গ্রুপ পর্ব ও নকআউট পর্বের শুরুর ধাপে পাস করেছেন লিওনেল মেসি। এবার আর্জেন্টিনা অধিনায়কের সামনে আরও কঠিন পরীক্ষা; প্রতিপক্ষ এবার নেদারল্যান্ডস।
মেসির পরীক্ষার ফল জানা যাবে শুক্রবার লুসাইল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ রাত ১টায় শুরু হওয়া ম্যাচ শেষের পর। আর্জেন্টিনা নাকি নেদারল্যান্ডস, কে কার শেষের বিষাদী রাগিনী বাজিয়ে জায়গা করে নেবে সেমি-ফাইনালের মঞ্চে, মিলবে সে প্রশ্নের উত্তরও। তবে এবারের মহারণের আট বছর আগের ছবি যেন কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখছে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদেরকে। মেসিকেও।
২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে সাও পাওলোর করেন্থিয়ান্স স্টেডিয়ামে সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে কাউকে আলাদা করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ৪-২ গোলে জেতে আর্জেন্টিনা।
সেবার অবশ্য সাও পাওলো থেকে রিও দে জেনেইরোর মারাকানায় গিয়ে জয়ের রঙে রঙিন হতে পারেননি মেসি। ফাইনালের অতিরিক্ত সময়ে মারিও গোটসের গোলে জার্মানির কাছে হারে আর্জেন্টিনা। মেসির অপেক্ষা বাড়ে; ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর আরেকটি শিরোপার জন্য আলবিসেলেস্তাদের হাহাকার দীর্ঘ হয় আরও। সেবার ট্রফির দিকে তার বিষণ্ন নয়নে আঁড় চোখে তাকানোর ছবিটাও দাগ কেটে যায় ভক্তদের মনে।
মাঝে ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে মেসি পাস করেননি। ফেল করে আর্জেন্টিনাও। কাজান অ্যারেনায় সাত গোলের রোমাঞ্চ ছড়ানোর গোলের জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় ছিলেন মেসি, কিন্তু পাননি জালের দেখা। ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে আকাশি নীল-সাদা জার্সিধারীরা বিষাদের সাগরে হাবুডুবু খায়। এবার সাফল্যের আঁচড় কাটার বজ্রকঠিন পণ করে কাতারে নোঙর ফেলেছেন বয়সের পাল্লায় ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বিকেলে থাকা মেসি।
গ্রুপ পর্বে জালের দেখা পেয়েছেন, আর্জেন্টিনাকে পথ দেখিয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। বিশ্বকাপের আঙিনায় পঞ্চমবারের মতো খেলতে এসে এবারই প্রথম নকআউট পর্বে পেয়েছেন গোলের দেখা, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলোয় ২-১ ব্যবধানে জেতা ম্যাচে। বড় একটা গেরো ছোটানোর তৃপ্তি তার সঙ্গী, কিন্তু তিনি যে অতৃপ্ত!
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে তাই প্রস্তুতি নেমে মেসি সময় নষ্ট করেননি একটুও। ছেলেবেলার মতো কৌতুহলী দৃষ্টিতে এদিক-ওদিক চোখ বুলিয়ে লেগে পড়েন ঘাম ঝরাতে। কোচ লিওনেল স্কালোনির সঙ্গে একটু-আধটু আলাপ সারতে দেখা যায় অধিনায়ককে। দূরের গ্যালারিতে বসে উভয়ের কথোপকথন শোনার উপায় নেই, কিন্তু অঙ্গ-ভঙ্গিতে বোঝা যায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মহারণ জয়ের ছকে মনোযোগী দুজনে।
আগের দিন রুদ্ধদ্বার অনুশীলন করেছিল আর্জেন্টিনা। এদিন গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য দুয়ার খুলল বটে, কিন্তু বরাবরের মতো সেই পনের মিনিটের জন্য। এই অল্প সময়ে মেসিকে আর কতটুকুই বা দেখা যায়, কতটুকুই বা বোঝা যায়! তবে তিনি পাসিং অনুশীলনে, রানিংয়ের সময়ে, শুটিং অনুশীলনে ঠিকই বুঝিয়ে দেন বকেয়া হিসাব মিটিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে আছেন কতখানি।
ডাচ পরীক্ষায় পাসের প্রস্তুতিতে নেমে তাই সতীর্থদের সঙ্গে কখনও ‘গ্রুপস্টাডি’ করেন মেসি, কখনও আবার সবুজে ঘেরা স্টেডিয়ামে গণমাধ্যমকর্মীদের দৃষ্টিসীমার একটু দূরে গিয়ে একাকী নিজেকে শাণিয়ে নিতে থাকেন আপনমনে। আরও একবার সবকিছু রিভিশন দিয়ে বসতে চান পরীক্ষার টেবিলে।