সৌর বিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদেশি দাতারা অর্থায়ন নিয়ে এগিয়ে এলে সরকার স্বাগত জানাবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বৃহস্পতিবার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান অক্সফাম আয়োজিত এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। পোশাক কারখানায় পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়ে পরামর্শ তুলে ধরতে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বিদেশিরা পরিবেশবান্ধব জ্বালানির পরামর্শ দিলেও এর যে বাড়তি খরচ, তার দায় নিতে চায় না জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, “বাংলাদেশে ১৭৬টি গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে। বিশ্বের আর কোনো দেশে এতগুলো পরিবেশবান্ধব কারখানা নেই। কিন্তু বিষয় হচ্ছে- এই কারখানা পরিবেশসম্মত করতে গিয়ে তাদের বাড়তি খরচ হলেও এর জন্য তারা পণ্যের কোনো বাড়তি মূল্য পায়নি।
“আমরা বলছি পরিবেশসম্মত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে যে বাড়তি খরচ হবে, সেটা উন্নয়ন সহযোগীদের বহন করতে হবে। অক্সফাম এ বিষয়ে ‘অ্যাম্বাসেডরের’ ভূমিকা পালন করতে পারে। কয়লা থেকে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে খরচ হয় ৬ সেন্ট, সেখানে সোলার থেকে উৎপাদনে খরচ হয় ১০ সেন্ট।
“উন্নয়ন সহযোগীদের বলব, আপনারা বাস্তবভিত্তিক চিন্তা করেন। উন্নয়ন চাইলে, আমাদের হাতের ময়লা মুছতে চাইলে ‘ফান্ডিং’ করেন। আমাদের দেশটাকে অন্যদের সাথে মেলালে হবে না।”
সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আগামী এক বছরের মধ্যে সৌর বিদ্যুৎ থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।”
সরকার এরইমধ্যে বায়ু-চালিত বিদ্যুৎ নিয়ে বিস্তারিত ‘ম্যাপিং’ করেছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, “মহেশখালীতে ৬০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন সহযোগীদের এ ধরনের প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।”
বাংলাদেশের মত ঘনবসতির দেশে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জটিলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখানে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩৫০ একর জমির প্রয়োজন।
“আমাদের দরকার ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেজন্য প্রয়োজন হবে ৩ হজার ৫০০ একর কৃষিজমি। এতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কৃষি জমির সঙ্কটের মধ্যে এধরনের প্রকল্প অনেক কঠিন।”
অনুষ্ঠানে প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের সাসটেইনেবলিটি অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান আনোয়ারুল ইসলাম জানান, তাদের কারখানাগুলোতে ৩ হাজার ৪৫৩টি সৌর প্যানেল স্থাপন করে ঘণ্টায় ২ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাবদ বার্ষিক খরচ ১২ শতাংশ কমিয়ে নানা সম্ভব।
নিজেদের গবেষণার তথ্যের বরাতে আনোয়ারুল ইসলাম জানান, দেশের পাঁচ হাজার কারখানায় সোলার প্যানেল বসাতে পারলে দৈনিক ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
“সোলার প্ল্যান্ট স্থাপনের আগে একটি বিদেশি কোম্পানি দিয়ে আমরা প্রতিটি কারখানায় এনার্জি অডিট করি। কারখানাগুলোতে কতটা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায় সেই সুযোগ নিরীক্ষা করা হয়। আমরা দেখেছি কারখানায় ১৫টি ইস্যু নিয়ে কাজ করলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস, বিদ্যুৎ, তেল সাশ্রয় করা সম্ভব। আমরা সাব-স্টেশনে সিনক্রোনাইজ প্যানেল বসিয়ে সৌর বিদ্যুৎকে সরাসরি গ্রিডের বিদ্যুতের সঙ্গে ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছি।”
ইমপ্রেস নিউটেক্স কমপোজিটের পরিচালক নাফিস উদ দৌলা বলেন, সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও জ্বালানি ও বিদ্যুতের খরচ অনেক বেড়েছে। এখন শিল্প মালিকরা চারগুণ বেড়ে যাওয়া জ্বালানি খরচের হিসাব সামলাতে ব্যস্ত। সে কারণে শিল্প মালিকরা এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা ভাবতে পারছেন না।
“আগামী সাত বছরের মধ্যে শিল্পখাতের ২০ শতাংশ জ্বালানি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আনা সম্ভব। সে লক্ষ্যে বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র ও দাতা দেশগুলো এক্ষেত্রে স্বল্প সুদের অর্থায়ন করতে পারে।”
অক্সফাম বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাহমুদা সুলতানা, পরিবেশ সচিব ফারহিনা আহমেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাল্টিলিটারাল ইকোনমিক অ্যাফেয়ারস উইংয়ের পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিনও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।