দেশের মানুষ এখন জেগে উঠেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যে আন্দোলনের জোয়ার উঠেছে, সেই জোয়ারে আওয়ামী লীগ ‘ভেসে যাবে’।
ময়মনসিংহ নগরীর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রাবাস মাঠে শনিবার বিকালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে তিনি একথা বলেন।খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সব কিছুকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা দেশে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগ কখনও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা গণতন্ত্র নষ্ট করে দিয়েছে।
“এই সরকার দেশের ভোট ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ সরকারের অধীনে কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। তাই এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।”
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “১ হাজার ৩৮০টা সিসি ক্যামেরা ছিল, পর্যাপ্ত নাকি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল, পুলিশ-র্যাব পাহারায় ছিল। তার পরও ওই নির্বাচন দুপুরের মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে।
“এ থেকেই প্রমাণ হয়, দলীয় সরকারের অধীনে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। তাই এই সরকারকে হটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে বাধ্য করা হবে।”
একাত্তরে শিশু তারেক রহমানকে নিয়ে খালেদা জিয়ার বন্দি জীবনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে জেল দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমানকে দেশে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তারেক রহমানের সব মামলা প্রত্যাহার করে নিরাপদে দেশে ফিরতে দিতে হবে।”
ফখরুল বলেন, “দেশটাকে আওয়ামী লীগ তলাবিহীন ঝুড়ি বানিয়েছিল। ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে দেশে দুর্ভিক্ষ লেগেছিল।
“শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল, তারা ১০টাকা কেজি দরে চল খাওয়াবে। সেই চলের দাম এখন ৯০ টাকা হয়েছে। তারা বলেছিল, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে; এখন চাকরি পেতে হলে আওয়ামী লীগের লোকজন ২০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়।“
বর্তমান সরকারের আমলে নিত্যপয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেড়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির দাম বাড়িয়েছে; তারা উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে, লুট করে বিদেশে টাকা পাচার করে। তারা কানাডা, লন্ডনে, বেগম পাড়ায় বাড়ি করে, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানায়। আর আমার দেশের মানুষ না খেয়ে থাকে।”
সরকার বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তাই জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করতে এই সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বানিয়েছে। সেই আইন দিয়ে মানুষকে ইচ্ছেমতো জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এই সরকার এবং সরকারের প্রধানমন্ত্রী সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। …তাকে নিয়ে কেন সমালোচনা করা যাবে না?”
খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে হত্যা, হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে ময়মনসিংহে এ সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এ কর্মসূচিতে ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ কে এম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব এ জেড এম জাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ ও উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।
সমাবেশের আগে বাসসহ গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের অনেককে হেঁটেই সভাস্থলে আসতে হয়েছিল।
এদিকে সন্ধ্যায় নগরীর রেলওয়ে চত্বরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটেছে। দুই পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপের মধ্যে এক পুলিশ সদস্য ও নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মাসুমসহ চারজন আহত হন।