সরকারের পতন ঘটাতে বিরোধী দলের আন্দোলনের মধ্যে কড়া জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার ক্ষমতা দেশে কারও নেই।
বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় পার্টির এক সংসদ সদস্যের শঙ্কা প্রকাশের পর তাকে অভয়ও দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তাকে অভয় এবং সরকাবিরোধীদের সতর্কবার্তা দেন সংসদ নেতা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
এদিনই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে যাওয়া বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো।
এই প্রেক্ষাপটে ‘ওয়ান-ইলেভেনের’ কথা তুলে ধরে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন- “আমরা জানি, আজকে কিন্তু এক-এগারো … দেশের যে পরিস্থিতি আমরা জানি, আমাদের দেশে প্রজ্ঞাবান নেতা আছে, অনুধানের ক্ষমতা যে ক্ষমতা- এক এগারোর আসবে না আবার; তবুও আমার জিজ্ঞাসা- সব পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে পা বাড়ানোর বোধ হয় এখনই সময়। আপনি কী মনে করেন?”
তাৎক্ষণিক এই প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা টানা ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, “বিএনপির চরম দুঃশাসনের কারণে, তার ফলেই ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা ঘটেছিল। আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারা, গাছ কেটে ফেলা, এগুলোই তো তারা করেছে।
“আমরা সরকারে যখন আছি, জনগণের জানমাল রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। এমন কোনো শক্তি তৈরি হয়নি বাংলাদেশে যে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে পারে।”
নিজ দলের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী, মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে জন্ম নেয়নি, আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে এদেশের মাটি ও মানুষের কাছ থেকে। কাজেই আমাদের শিকড় অনেক দূর প্রোথিত আছে।
“আইয়ুব খান চেষ্টা করেছে, ইয়াহিয়া চেষ্টা করেছে, জিয়া চেষ্টা করেছে, জেনারেল এরশাদ চেষ্টা করেছে, খালেদা জিয়াও চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে। পারেনি, পারবেও না ইনশাআল্লাহ। আর কোনো দিন পারবে না।”
জনগণের আওয়ামী লীগের উপরই বার বার আস্থা রাখছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, “জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় একারণে যে তারা জানে,আওয়ামী লীগ যে ওয়াদা দেয়, তা রাখে। আওয়ামী লীগ যে কথা দেয়, সে কথা রাখে। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই মানুষ ভোটটা শান্তিতে দিতে পারছে।”
আওয়ামী লীগের টানা ক্ষমতায় থাকা নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তারপর প্রশ্ন তোলে কারা? এ নির্বাচনকে কলুষিত করেছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেছে, মানুষের ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে, যারা মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, তারা প্রশ্ন তোলে।”
সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “কাজেই আপনার (স্পিকার) মাধ্যমে এ সংসদ সদ্যকে বলি-ঘাবড়ানোর কিছুই নেই- এটুকু বলতে পারি। ঘাবড়াবেন না; আমরা আছি না? কোনো চিন্তা নেই।”
‘কোথায় দুর্নীতি দেখান, চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি’
মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করতে পারলে তিনি জবাবও দিতে তৈরি।
গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান একটি সম্পূরক প্রশ্নে মেগা প্রকল্প ও কুইক রেন্টালসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির অভিযোগ করেন।
মোকাব্বিরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মনে হচ্ছে, আমাদের সংসদ সদস্য বিরোধী দলে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যেসমস্ত অভিযোগ তিনি এনেছেন তা সম্পূর্ণ অমুলক।
“তিনি মেগা প্রকল্প নিয়ে কথা বলেছেন। এই মেগা প্রকল্পের সুবিধাভোগী কারা? এদেশের সাধারণ মানুষ। এই মেগা প্রকল্প অন্য কোনো সরকার করতে পারেনি, আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে।”
পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওয়ার্ল্ড ব্যাংক তো পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। এটা শুধু আমার কথা নয়, কানাডার ফেডারেল কোর্টের মামলার রায়েই বলা হয়েছে- সকল অভিযোগ মিথ্যা।
“সেক্ষেত্রে কীভাবে বললেন, দুর্নীতি হচ্ছে বাংলাদেশে। দুর্নীতি যদি সত্য হত, তাহলে এত অল্প সময়ে এসব প্রজেক্টের কাজ কি শেষ হত?”
মোকাব্বির খানকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মাননীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক। উনার একটা সেকেন্ড হোমও আছে। সেই সেকেন্ড হোম অর্থাৎ ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম দেড়শ পার্সেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে ভোগ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন বিদ্যুত সাশ্রয় করা হয়। নিয়মের ব্যত্যয় হলে জরিমানা কর করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও সেই অবস্থা নয়।”
সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো তৈরি করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কুই্ক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো এনেছিলাম বলেই আমরা মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছিলাম। এখন আমরা প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। কুইক রেন্টালে যদি দুর্নীতি হত, তাহলে তো এত বিদ্যুৎ দিতে পারার কথা ছিল না।
“বিএনপির আমলে বিদ্যুতে দুর্নীতি হয়েছিল বলেই বিশ্ব ব্যাংক টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল। ঢাকা ময়মনসিংহ সড়কে দুর্নীতি করেছিল বলেই সেই টাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগের আমলে সেটা হয়নি। যেখানে বড় বড় মহারথীরা আমাদের দুর্নীতির খোঁজ পায়নি। সেখানে কিছু লোক ভাঙা রেকর্ডের মতো বলেই যাচ্ছেন- কুইক রেন্টাল, কুইক রেন্টাল!”
মোকাব্বিরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “মাননীয় স্পিকার আপনার মাধ্যমে মাননীয় সম্পূরক প্রশ্নকর্তাকে আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি- কোথায়, কত দুর্নীতি হয়েছে? সেই কথাটা তাকে এখানে স্পষ্ট বলতে হবে। যার জবাব আমি দেব।”
মজুদদারি-কালোবাজারি করলে ‘ব্যবস্থা’
সরকারি দলের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর এক প্রশ্নের জবাবে এই সংকটকালে পণ্য মজুদদারি ও কালোবাজারি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমাদের ব্যবসায়ী, যারা ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা করেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় রোজা-উৎসব বা চাহিদার সময়ে তারা যে করে হোক দাম বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
“এটা আসলে অমানবিক। যারা মজুদদারি, কালোবাজারি, এলসি খোলা নিয়ে দুই নম্বরি করবে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি এবং নেব। প্রয়োজনে আরও কঠোর ব্যবস্থা আমরা নেব। মানুষের কষ্ট যেন না হয়, সেদিকে আমরা দৃষ্টি দেব।”
প্রধানমন্ত্রী পানি, বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাসসহ সবকিছু ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান।
আরকে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রমজান মাসে যে পণ্যগুলো প্রয়োজন, তার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে।