নিজেদের প্রিমিয়াম গ্রাহক সেবা চালুর পর বাছাই করা ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে ‘অফিসিয়াল’ লেবেল যোগ করবে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের সামাজিক প্ল্যাটফর্ম টুইটার। এর মধ্যে থাকবে বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও সরকারী সংস্থা।
মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোম্পানির নির্মীয়মান পণ্যবিষয়ক নির্বাহী এস্থার ক্রফোর্ড।
ক্রফোর্ড আরও বলেছেন, নতুন করে ঢেলে সাজানো ‘টুইটার ব্লু’ গ্রাহক সেবা, যাতে ব্যবহারকারী অর্থের বিনিময়ে নিজ অ্যাকাউন্টে ‘ব্লু’ ব্যাজ পাবেন, সেটি আসলে পরিচয় নিয়ে কোনো সিশ্চয়তা দেবে না।
পরিচয় যাচাইয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের অ্যাকাউন্টের ছদ্মবেশ ধারণের ঝুঁকি বাড়তে পারে – এমন শঙ্কার বিষয়টি উঠে এসেছে রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
“এরইমধ্যে, এমন ঝুঁকি থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ‘ব্লু’ গ্রাহক সেবার উন্মোচন পেছাতে বাধ্য হয়েছে টুইটার।” --টুইট করেন প্ল্যাটফর্মটির নিরাপত্তা প্রধান ইয়োয়েল রথ।
বিভিন্ন গবেষক ও এই বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তাদের জাল অ্যাকাউন্ট তৈরির বিষয়টি বৈশ্বিকভাবে টুইটারের জন্য বেশ পুরোনো সমস্যা।
“তবে, ‘ব্লু’ ব্যাজ থাকা আগের সকল অ্যাকাউন্টই ‘অফিসিয়াল’ লেবেল পাবে না। আর এই লেবেল কেনাও যাবে না।” --বলেন ক্রফোর্ড।
“যেসব অ্যাকাউন্ট অফিসিয়াল লেবেল পাবে, সেগুলো হচ্ছে সরকারী সংস্থা, বাণিজ্যিক কোম্পানি, ব্যবসায়িক অংশীদার, শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম, প্রকাশক ও অন্যান্য জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব।” --টুইট করেন তিনি।
“বিদ্যমান ‘ব্লু’ ব্যাজের পাশাপাশি নতুন লেবেলের আত্মপ্রকাশ একটি ‘বিভ্রান্তিকর ব্যবস্থা তৈরি করবে’, যেখানে কয়েকটি (তবে সব নয়) আগেই ভেরিফাই করা অ্যাকাউন্ট ‘অফিসিয়াল’ হিসেবে বিবেচিত হবে।” --বলেন টুইটার পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য জেসন গোল্ডম্যান। এ ছাড়া, শুরুর বছরগুলোতে কোম্পানির পণ্য প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
“এটি একেবারে জগাখিচুরি” --বলেন তিনি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
এই বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, টুইটারের নীতিনির্ধারকরা অভ্যন্তরীণভাবে চাপ সৃষ্টির পর এই অফিসিয়াল লেবেল এলো, যেখানে ‘ব্লু’ ব্যাজ পেতে বৈশ্বিক বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তার অর্থ প্রদানে অনিচ্ছার সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে তারা দৃঢ়ভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
নিজেদের যোগাযোগ দলের বেশ কিছু সদস্য হারানো টুইটারের কাছে রয়টার্স এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কোনো উত্তর মেলেনি।
মঙ্গলবার ক্রফোর্ড আরও যোগ করেন, এখন থেকে অ্যাকাউন্টের ধরন পৃথক করার বিভিন্ন উপায় পরীক্ষা করে দেখবে টুইটার।
অ্যাকাউন্টের ধরন নিয়ে কী হচ্ছে আসলে?
টুইটারে এখন যতো অ্যাকাউন্টে নীল টিকচিহ্ন রয়েছে, সেগুলোকে একাধিক শ্রেণিতে ভাগ করা সম্ভব। এর মধ্যে একদিকে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী ও সরকারি সংস্থা ও জনগুরুত্বপূর্ণ বেসরকারি কোম্পানি। এর বাইরে রয়েছে সামাজিক মাধ্যমে প্রভাবশালী লোকজন যারা জনপ্রিয় হলেও তাদের বেশিরভাগের পেছনেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই। এর মধ্যে আছে ইউটিউবার, ইনস্টগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সার, পডকাস্টার বা ফেইবুকার।
টু্ইটার (মতান্তরে ইলন মাস্ক) সম্ভবত মোটা দাগে এই দুই শ্রেণির প্রথমটিকে বিনাপয়সায় ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টের স্বীকৃতি দেবেন ‘অফিশিয়াল’ ট্যাগ জুড়ে দিয়ে। আর বাকীদের বেলায় মাসে আট ডলারের বিনিময়ে টিক চিহ্ন বেচবেন।
এতে করে আগে যেমন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আর ইনফ্লুয়েন্সার অ্যান্ড্রু টেট-এর মতো লোকজন একই শ্রেণিতে নীল ভেরিফায়েড চিহ্ন পেতেন, এখন সম্ভবত সেটি হবে না।
দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যম বা গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীর বিপরীতে সামাজিক মাধ্যমে স্রেফ সস্তা জনপ্রিয়তার মাধ্যমে প্রভাববিস্তারী লোকদের মধ্যে এই বিভাজন সম্ভবত খারাপ কিছু হবে না, যদি টুইটার এমন কিছুরই পরিকল্পনা করে থাকে।