প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত এক যুগে যুগ ধরে উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের যে যাত্রা চলছে, তা কেউ থামাতে পারবে না।
শনিবার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’র দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে নির্মাণাধীন এই টানেলের এই অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ ঘোষিত যে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল, সেটাও কিন্তু আমরা মাথায় রেখেছি। তাছাড়া আমাদের যে ২০১০ থেকে ২০২০ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সেটা আমরা বাস্তবায়ন করেছি এবং ২০২১ থেকে ২০৪১ এর মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ।
“সেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিকীর মাধ্যমে সেটা আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না।”
সরকারের সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমাদের উন্নয়ন অনেকের চোখে পড়ে না। তাদের হয় চোখ নষ্ট, যদি চোখ নষ্ট হয় চোখের ডাক্তার দেখাতে পারেন, আমরা খুব ভালো আই ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি, সেখানে চোখ দেখিয়ে …. আমার মনে হয় তাহলে হয়ত তারা দেখতে পাবেন।
“আর কেউ যদি চোখ থাকতে অন্ধ হয়, তাহলে আমাদের কিছু করার নাই। আমি মনে করি আমাদের কিছু লোক চোখ থাকতেও অন্ধ। তারা দেখেও না দেখার ভান করে। কারণ নিজেরা কিছু করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও কিছু করতে পারবে না।”
বিএনপি এবং দলটির নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “হ্যাঁ, ক্ষমতায় বসে নিজেরা খেতে পারবে, নিতে পারবে। অর্থ চোরাচালান করতে পারবে, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানি করতে পারবে, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ, এগুলো পারবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করেনি, ভবিষ্যতেও করতে পারবে না।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই দেশে দারিদ্র্য আমরা দূর করতে সক্ষম হয়েছি। এখন আর খাবারের জন্য হাহাকার করতে হয় না।
করোনাভাইরাস মহামারীর মোকাবেলায়ও সরকার সফল বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বে জরুরি পণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, সেই পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে ব্যয় সাশ্রয়ী হতে এবং খাদ্য উৎপাদনে জোর দিতে আহ্বান জানান তিনি।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “মুদ্রাস্ফীতি এটা একটা বিরাট সমস্যা সারাবিশ্বব্যাপী। তার ধাক্কা থেকে আমরাও দূরে না। আমাদের উপরও তার আঘাত এসে পড়েছে। এটা আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব যদি দেশবাসী এই ব্যাপারে সজাগ হন, সচেতন হন, নিজেদের সঞ্চয় বাড়ান, নিজেরা সাশ্রয়ী হন, মিতব্যয়ী হন। তাহলেই কিন্তু আমরা কখনও এই ধরনের মন্দায় পড়ব না, আমরা এগিয়ে যেতে পারব।”
কর্ণফুলী টানেল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর কিছুদিন পরে দ্বিতীয় টিউবের কাজ যখন সম্পন্ন হবে, পুরো টানেলটা আমরা উদ্বোধন করব।”
অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও চট্টগ্রামের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বক্তব্য রাখেন।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তি স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।
টানেলটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং আনোয়ারায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মধ্যে নদীর তলদেশে সংযোগ স্থাপন করছে।
মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিমি এবং এতে দুটি টিউব রয়েছে। প্রতিটিতে দুটি লেন রয়েছে। এই দুটি টিউব তিনটি জংশনের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। এই ক্রস প্যাসেজগুলি জরুরি পরিস্থিতিতে অন্যান্য টিউবগুলিতে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিমি এবং ভিতরের ব্যাস ১০.৮০ মিটার। মূল টানেলের পশ্চিম এবং পূর্ব দিকে একটি ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে।
বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রায় ১০,৫৩৭ কোটি টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি অর্থ দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।