ইন্টারনেটে নজরদারিতে সরকারের কেনা প্রযুক্তি নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ প্রকাশের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দাবি করেছেন, সরকার এক্ষেত্রে আইনসিদ্ধ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
বৃহস্পতিবার সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে এই দাবি করেন তিনি। এদিনই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ইসরায়েল থেকে আড়ি পাতার প্রযুক্তি কেনার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়।
সম্প্রতি ইসরায়েলের সংবাদপত্র হারেৎসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারনেটে গোয়েন্দা নজরদারিতে সে দেশের এক কোম্পানি থেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কিনেছে বাংলাদেশ।
সংসদে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল সোশাল মিডিয়ায় নজরদারিতে সরকারের প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে কথা বলেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে দেশের অগ্রগতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দৃঢ় অবস্থান ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দেশ ও সরকার বিভিন্ন বিরোধী কার্যক্রম রহিতকল্পে এনটিএমসিতে Open Source Intelligence Technology (OSINT) এর মতো আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে এবং একটি Integrated Lawful Interception System (ILIS) চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
এনটিএমসি বা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালেয়ের অধীন একটি দপ্তর, যা সরকারের নির্দেশে ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে আইনানুগ আড়ি পাতার সুবিধা এবং নির্ধারিত কর্তৃপক্ষকে যোগাযোগ সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে থাকে।
সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সংস্থাগুলোকে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে প্রচলিত ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমগুলোতে নজরদারি করার ব্যবস্থা করে দেওয়াও এই দপ্তরের কাজ।
সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলতে চেয়েছেন যে সরকারের এই নজরদারি চলে আইনসিদ্ধভাবে, ইন্টারনেটে প্রকাশিত তথ্যের উপর, কারও গোপনীয় তথ্য আহরণের জন্য নয়।
এদিকে ইসরায়েল থেকে প্রযুক্তি কেনার খবরে উদ্বেগ জানিয়ে টিআইবির বিবৃতিতে বলা হয়, “গত কয়েক বছরে রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমকর্মী এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় এটা এক রকম নিশ্চিত করে বলা যায় যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ এক বা একাধিক বিশেষায়িত সরকারি সংস্থা নজরদারির বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে।
“আপাতদৃষ্টে, এমনটা বলা অত্যুক্তি হবে না যে ক্ষমতাসীন মহল এ ধরনের নজরদারির প্রযুক্তি যথেচ্ছ ব্যবহার করছে।”
সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অনুপস্থিতিতে এমন প্রযুক্তির ব্যবহারে ব্যক্তিগত তথ্যের ও যোগাযোগের গোপনীয়তা, সুরক্ষা এবং বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ একাধিক সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
ইসরায়েলি কোম্পানি থেকে প্রযুক্তি কেনার সংক্রান্ত খবরে বিষয়ে সরকারের বক্তব্যও দাবি করেছে টিআইবি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।