সম্প্রতি বইয়ের কপিরাইট সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মারাক্কেশ চুক্তিতে অনুসমর্থন করেছে বাংলাদেশ। আর তাতেই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বই এখন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পঠনোপযোগী করতে আর বাধা থাকছে না।
প্রতিবছরই বিশ্বে লক্ষ লক্ষ ছাপা অক্ষরের বই মুদ্রিত হলেও দৃষ্টি ও পঠনপ্রতিবন্ধীদের পাঠ-উপযোগী বই বাজারে আসে নগণ্য সংখ্যায়। এই সমস্যা মিটাতে উদ্যোগ নেয় জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন’ তথা ডব্লিউআইপিও। মরক্কোর মারাক্কেশ শহরে সংস্থাটির একটি কূটনৈতিক সম্মেলনে ‘মারাক্কেশ ট্রিটি’ নামের একটি চুক্তি করা হয়। ২০১৩ সালে করা এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে কপিরাইট ছাড়া তৈরির ব্যবস্থা।
প্রতিবেশ দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল আগেই এই চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করেছে। দেশে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জ্ঞানচর্চার সুযোগ বাড়াতে এবার বাংলাদেশও সমর্থন দিল এই চুক্তির।
মারাক্কেশ চুক্তি পঠনপ্রতিবন্ধীদের জন্য যেকোনো বই বা দলিলাতি লেখকের অনুমতি ছাড়াই ব্রেইল, অডিও কিংবা বড় হরফে বই মুদ্রণ করার সুযোগ দেয়। অবশ্য বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ কাজ করার সুযোগ নেই।
ডব্লিউআইপিও বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পড়ার সুযোগ করে দিতে বিশাল এক ভার্চুয়াল পাঠাগার তৈরি করেছে। ‘এক্সেসিবল বুক কনসোর্টিয়াম’ নামে পরিচিত এই অনলাইন ক্যাটালগের বই সংখ্যা ৮ লাখেরও বেশি। মারাক্কেশ চুক্তিতে অনুসমর্থন দেয়ায় বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে তিন লাখ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এখন এই বিপুল পরিমাণ বই পড়ার সুযোগ পাবে।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে কপিরাইট আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। মারাক্কেশ চুক্তির শর্ত পালনে বাংলাদেশও কপিরাইটের শর্তাবলি শিথিল করবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বইয়ের জন্য।
সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এ বিষয়ে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোকে বলেন, “মারাক্কেশ চুক্তিতে অনুসমর্থনের মধ্য দিয়ে দেশের দৃষ্টি ও পঠনপ্রতিবন্ধীদের বাধামুক্ত তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী আইন ‘কপিরাইট আইন ২০২২’ প্রণীত হতে যাচ্ছে। অতি দ্রুত আইনটি বিল আকারে পাসের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। কপিরাইট আইন পাসের মাধ্যমে মারাক্কেশ চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন হবে। আইনটির ৫১ ধারা ও ৭০ (২) উপধারায় এ–সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত হয়েছে।”