আইন অনুযায়ী অটোরিকশার সামনে দুপাশে বাইরের অংশে ‘ফ্ল্যাট লুকিং গ্লাস’ বা সাইড ভিউ মিরর বসানোর ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
গাড়ির ফিটনেস সংক্রান্ত এক রিট মামলায় এ সম্পর্কিত সম্পূরক আবেদনের শুনানি করে বিশেষজ্ঞ মত নেওয়ার পর মঙ্গলবার এ আদেশ দেয় বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, দুই মাসের মধ্যে এ বিষয়ে টেলিভিশন ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর ওই বিজ্ঞপ্তিতে অটোরিকশার সামনে দুই পাশে লুকিং গ্লাস বসানোর জন্য মালিকদের এক মাস সময় বেঁধে দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী মো. তানভির আহমেদ। বিআরটিএ’র পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মুহাম্মদ রাফিউল ইসলাম।
রাফিউল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আদেশের অনুলিপি পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে বিআরটিএকে টেলিভিশন এবং পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বলতে হবে, অটোরিকশার প্রত্যেক মালিক যেন এক মাসের মধ্যে বাইরে দুই পাশে লুকিং গ্লাস স্থাপন করেন।
“গাড়ির পেছনেও গ্লাস (রিয়ার ভিউ মিরর) বসাতে বলেছেন আদালত। তবে, সেটা বাধ্যতামূলক না, ঐচ্ছিক।”
অটোরিকশার বাইরে সামনের দুই পাশে যে লুকিং গ্লাস বসাতে বলা হয়েছে, তা অবশ্যই ‘ফ্ল্যাট লুকিং গ্লাস’ (সমতল আয়না) হতে হবে বলে জানান এ আইনজীবী।
অন্যদিকে রিটকারী আইনজীবী তানভির আহমেদ বলেন, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে ওই সময়ের মধ্যে বিআরটিএকে আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।
গতিবিধি ও চলাচল নিরাপদ রাখতে গাড়ির পেছনের (ব্লাইন্ড জোন এরিয়া) গাড়ির অবস্থান দেখার জন্য গাড়িতে ‘সাইড ভিউ মিরর’ বা ‘লুকিং গ্লাস’ থাকা বাধ্যতামূলক। মোটরযান বিধি, ১৯৪০ এর ১১৭ বিধি ও মোটরযান আইন, ২০১৮ এর ২(২৬) ধারা অনুযায়ী চালকের সামনে সিএনজি চালিত অটোরিকশার বাইরের দুই দিকে সাইড ভিউ মিরর বা লুকিং গ্লাস স্থাপনের বিধান রয়েছে।
কিন্তু ঢাকা শহরের প্রায় শতভাগ অটোরিকশার সাইড মিররই ভেতরে ঢোকানো। অথচ একই মডেলের অটোরিকশা যেগুলো ভারতে চলছে, সেগুলোর সাইড ভিউ মিরর গাড়ির বাইরে বের করা।
রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য তুলে ধরে যানবাহনের ফিটনেস জরিপে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর আদালত গণপরিবহনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ফিটনেস জরিপের জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অন্তত ১৫ সদস্যের একটি জাতীয় অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে রুল জারি করা হয়।
রিট মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সম্পূরক আবেদনে গত বছরের ৩১ অগাস্ট হাই কোর্ট ফের রুল জারি করে আদেশ দেয়।
মোটরযান বিধি, ১৯৪০ এর ১১৭ বিধি অনুযায়ী সিএনজি চালিত অটোরিকশার বাইরে সাইড ভিউ মিরর বা লুকিং গ্লাস স্থাপনের বিষয়টি তদারকি করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চায় আদালত।
সেই সঙ্গে সাইড ভিউ মিরর অটোরিকশার ভেতরে না বাইরে থাকবে, সে বিষয়ে বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রধানকে মতামত দিতে বলে হাই কোর্ট।
বিশেষজ্ঞ মতামত জানাতে বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. আশরাফুল ইসলাম ও অধ্যাপক সুমন সাহার সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছিল। তাদের প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয় গত ১৭ নভেম্বর।
অটোরিকশার পেছন দিক (ব্লাইন্ড জোন এরিয়া) ৭ শতাংশ বেশি দেখতে পাওয়ার ফলাফল দেখিয়ে ‘সাইড ভিউ মিরর’ অটোরিকশার বাইরে অংশে রাখার পক্ষে মত দেয় ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অটোরিকশার ভেতরে লুকিং গ্লাস থাকলে মাত্র ৩৪ শতাংশ ব্লাইন্ড জোন এরিয়া দেখা যায়। আর সাইড ভিউ মিরর বা লুকিং গ্লাস যদি চালকের সামনে অটোরিক্সার বাইরে থাকে, তাহলে ৪১ শতাংশ দেখা যায়।
সে হিসাবে অটোরিকশার বাইরে লুকিং গ্লাস রাখলে ব্লাইন্ড জোন এরিয়া বেশি দেখা বা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।
“ফলে নির্মাতা বা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত চালকের সামনে সিএনজি অটোরিকশার বাইরের দিকে লুকিং গ্লাস স্থাপন করা। তাছাড়া রিয়ার ভিউ মিরর (পেছন দেখার আয়না) না থাকলে ব্লাইন্ড জোন এরিয়া দেখার জন্য অটোরিকশার পেছনে ছোটো ক্যামেরা এবং ভেতরে এলসিডি ডিসপ্লে বসানো যেতে পারে।”