বড় ঋণ বিতরণে অনিয়ম ও নিয়ম না মানার খবর প্রকাশের পর শরীয়াহভিত্তিক পাঁচ ইসলামি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘নিবিড় তত্ত্বাবধানের’ আওতায় আসছে; ঋণ বিতরণসহ প্রতিদিন জানাতে হবে একাধিক তথ্য।
শরীয়াহভিত্তিক ১০ ব্যাংকের মধ্যে পাঁচটিকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের এক সভা থেকে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
এখন থেকে ব্যাংকগুলোর এক কোটি টাকার উপরের ঋণ বিতরণের তথ্য জানাতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বিভিন্ন ব্যাংকে নিযুক্ত পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়কদের সঙ্গে এ বৈঠক করেন, যেখানে আগামী রোববার থেকেই ব্যাংকগুলোকে তথ্য দেওয়ার নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
বৈঠকে ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে থাকা পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়কদের করণীয় নিয়েও নির্দেশনা দেন গভর্নর। ব্যাংকগুলো থেকে নিয়মিত যেসব তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ে থাকে সেগুলো দৈনিক এবং প্রয়োজনে যেকোনো সময়ে নেওয়ার নির্দেশনাও দেন তিনি।
বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে নিযুক্ত পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়কদের প্রতি নির্দেশনা দিতেই বৈঠকটি করেছেন গভর্নর। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ নিয়ে যে অভিযোগগুলো এসেছে তা নিবিড়ভাবে তত্ত্বাবধান করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
‘‘শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ঋণতথ্যও নিয়মিত সংগ্রহ করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। তত্ত্বাবধানের স্বার্থে সেটি দৈনিকও হতে পারে।’’
শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে যে পাঁচটির তথ্য দৈনিক ভিত্তিতে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলোর নাম প্রকাশ করেননি বাংলাদেশ বাংকের মুখপাত্র।
এর আগে ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ আসার পর গত ১২ ডিসেম্বর দীর্ঘ সময় বিরতির পর আবার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) ও
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও ফার্স্ট সিকিউরিটিতে মোতাসিম বিল্লাহকে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত তদারকির অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলো থেকে বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসভিত্তিক তথ্য নিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এসব তথ্যর মধ্যে রয়েছে ঋণ বিতরণ, একক গ্রাহক সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে কি না সেটির তথ্য, আমানত, ঋণ আদায়, খেলাপি শ্রেণিকরণ, রেমিটেন্স, রপ্তানি, আমদানি, সিআরআর, এসএলআর, এডি রেশিও ইত্যাদি।
এসব তথ্য নিয়মিতই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্বাক্ষরে জমা দিতে হয়। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভারে অনলাইনেও জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসব তথ্য না দিলে জরিমানার সম্মুখীন হতে হয় ব্যাংকগুলোকে। এরমধ্যেই বিভিন্ন সময় ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়ে। সম্প্রতি বড় ঋণ অনিয়মে কয়েকটি ঘটনার সংবাদ সামনে আসার পর এক কোটি টাকার উপরে দেওয়া ঋণের তথ্য প্রতিদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানানোর নির্দেশনা এল।
কর্মকর্তারা জানান, যেসব তথ্য দৈনিকভিত্তিতে জমা দিতে হবে সেগুলোর একটি ছক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাঠানো হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। এর বাইরেও পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়কদের যেকোনো মুহূর্তে তথ্য দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর।
কোনো ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে গেলে সেটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত ব্যাংকিং নিয়মাচার পালন, ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
পর্যবেক্ষকরা ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদ, নির্বাহী ও অডিট কমিটির বৈঠকে অংশ নিয়ে বৈঠকের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রতিবেদন জমা দিয়ে থাকেন।
গত জুলাইতে দায়িত্ব নেওয়ার পর পর্যবেক্ষকের পাশাপাশি সমন্বয়ক নিয়োগের প্রথা চালু করেন গভর্নর রউফ তালুকদার।
পর্যবেক্ষকদের মত সমন্বয়কদের ব্যাংকের নিয়মিত প্রতিটি সভায় অংশ নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তবে সমন্বয়ক চাইলে ওই তিন সভায় অংশ নিতে পারবেন, যেকোনো নথি ও তথ্য চাইতে পারেন।
ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতের পাঁচ ব্যাংকে সমন্বয়ক বসিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সাইফুর ইসলামকে ন্যাশনাল ব্যাংকে, শফিকুল ইসলামকে পদ্মা ব্যাংকে (সাবেক ফারমার্স), নূরুল আমিনকে ওয়ান ব্যাংকে, আনোয়ার হোসেনকে এবি ব্যাংকে ও ফোরকান হোসেনকে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গভর্নর এর আগে গত আগস্টে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, ১০টি র্দুবল ব্যাংক চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের একটি পরিকল্পনা দেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। তবে ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশ করেননি।