বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে ‘ভোট চোর’ আর ‘খেলা হবে’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে রংপুর নগরীর বিভিন্ন অলিগলি আর সভাস্থল। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
শনিবার ভোর থেকে নগরীর প্রবেশমুখ মেডিকেল মোড়, টার্মিনাল রোড মাহিগঞ্জ সাতমাথাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মিছিল নিয়ে আসতে দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রধান সড়কগুলোতে মিছিলের চাপ বাড়ছে; সঙ্গে স্লোগানে প্রতিধ্বনিও।
বিএনপির চতুর্থ বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে রংপুরে। শহরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে শনিবার দুপুর থেকে সমাবেশের মূল কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
লালমনিরহাটের বড়বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক অটোরিকশায় করে সাড়ে চার হাজারের বেশি বিএনপির নেতাকর্মী সকাল ৮টার দিকে রংপুর শহরে প্রবেশ করেন। তাদের হাতে ছিল ধানের শীষ আর বাঁশের লাঠিতে বাঁধা জাতীয় পতাকা। আর মুখে মুখে ছিলো বিভিন্ন স্লোগান।
সারিবদ্ধভাবে একে একে অটোরিকশাগুলো সাতমাথা অতিক্রম করে পার্কের মোড়ে গিয়ে জমায়েত হয়। পরে সেখান থেকে বিশাল একটি মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলের দিকে রওনা হন তারা।
বড়বাড়ি চড় বুদারু এলাকার ইব্রাহিম ও আমিনুর ইসলাম জানান, তারা শুক্রবার রাত ২টায় কয়েক’শ অটোরিকশা নিয়ে রংপুরের উদ্দেশে রওনা হন। প্রতিটি অটোরিকশায় ৮ থেকে ১০ জন করে নেতাকর্মী ছিলো। তাদের কোথাও কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি।
তবে পরিবহন ধর্মঘট না থাকলে আরও হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক সমাবেশে আসতেন বলে জানালেন বিএনপি কর্মী রেজাউল করিম।
আর এশরামুল রফিকুল নামের আরেক কর্মীর দাবি, শুধু বড়বাড়িসহ আশপাশের এলাকা থেকে বিএনপির ২০ হাজারের বেশি লোকজন রংপুর এসেছেন।
প্রায় ১৫ কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটে রংপুরে এসেছেন বলে জানালেন বড়বাড়ির ইয়াকুব আলী নামের বিএনপির আরেক কর্মী। তিনি বলেন, “আমাদের মনে অনেক কষ্ট। সরকার আমাদের সমাবেশে আসতে দেবে না বলে ধর্মঘট দিয়েছে। কিন্তু দলের লোকজন হেঁটে, অটোরিকশায় করে, কেউবা মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে এসেছে।“
গোলজার হোসেন বলেন, “এই সরকার মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। এবার সুষ্ঠ ভোট হলে খেলা হবে, সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।”
সকাল ৭টার দিকে কুড়িগ্রাম থেকে আসা প্রায় সহস্রাধিক লোকের একটি মিছিল নগরীর সাতমাথা এলাকা পার হয়ে রংপুর শহরে প্রবেশ করে। মোটর মালিক সমিতির ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় তারা অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন ছোট যানে করে ভেঙে ভেঙে সমাবেশে যোগ দিতে রংপুরে এসেছেন বলে কথা বলে জানা গেছে।
ঠাকুরগাঁ জেলার শুকান পুকুর থেকে আসা বেলাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুক্রবার রাত ১২টার দিকে আমরা মাইক্রোবাসে করে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হই। এলাকা থেকে কিছুদূর আসার পর মাইক্রোবাস থেকে আমাদের নামিয়ে দেয় পুলিশ। তারপর অটোরিকশা করে আমরা রংপুরে সমাবেশস্থলে আসি।”
ধর্মঘটের বিষয়টি মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী রংপুরে আসতে শুরু করে। শুক্রবার দিনভর মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, ট্রেন ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে রংপুরে এসে পৌঁছানোর পর সমাবেশ মাঠে জড়ো হন তারা।
এদিকে বিএনপির নেতারা বলছেন, নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন স্থানে গুলিতে দলের নেতাকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদসহ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রংপুরে তাদের চতুর্থ বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ব্যাহত করতে সরকারদলীয় লোকজন ধর্মঘট দিয়েছে অভিযোগ করে তারা আরও বলেন, ধর্মঘটসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করে রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশে লাখ লাখ নেতাকর্মী ও সমর্থক উপস্থিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গণসমাবেশে যোগ দিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ইতোমধ্যে রংপুরে এসে পৌঁছেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ, যুগ্ম মহাসচিব হারুন উর রশিদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব (দুলু), সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক দলের মহাসচিব শহিদুল ইসলাম (বাবুল), ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনোকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদসহ অন্যরা।
গণসমাবেশের প্রস্তুতির বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন বাধা, ধর্মঘট উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে দলীয় নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। অনেকেই বুধবার রাত থেকেই রংপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার রাতেও অনেকে এসেছেন।
“শনিবার সকালের মধ্যে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে জনস্রোতে নেমেছে। আশা করছি, কয়েক লাখ মানুষের জনসমাগমে সরকারের সকল বাধা ভেস্তে যাবে।”
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।