প্রায় এক যুগ পর চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) পাঁচ ছাত্রলীগ নেতার আজীবন বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ জানান। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়া ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২০১০ সালের আহ্বায়ক কমল কান্তি মজুমদার, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মোমেন, সুব্রত দে, সদস্য আবু হাসান লাভলু ও শাহাদাত হোসেন শুভ। তারা সবাই তখন স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছিলেন।
কমল বর্তমানে কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সদস্য, মোমেন ও লাভলু বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। শুভ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কিউরেটর এবং সুব্রত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
উপাচার্য জানান, ‘শর্তসাপেক্ষে’ পাঁচ শিক্ষার্থীর আজীবন বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা নতুন করে ভর্তি হয়ে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।
২০০৯ সালে ক্যাম্পাসে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও প্রশাসন মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায়। অনুষ্ঠান আয়োজনে বাধা পেয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা উপাচার্যের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা আসে।
ওই সময় তাদের পক্ষ নিয়ে চট্টগ্রামের তৎকালীন সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী তৎকালীন উপাচার্য নীতিশ চন্দ্র দেবনাথের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে অভিযোগ দেন।
পরের বছরের ১২ জানুয়ারি তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় কিছু অসঙ্গতির কথা উল্লেখও করা হয়েছিল।
এদিকে ২০১০ সালের ৪ ডিসেম্বর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচ ছাত্রলীগ নেতাকে চিরতরে বহিষ্কার করা হয়।
এর প্রায় ১২ বছর পর গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের ৫৯তম সভায় পাঁচ ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা এলে উপাচার্য বিষয়টি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে সিন্ডিকেটে পাঠায়।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে কমল কান্তি মজুমদার বলেন, এ ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চর্চা করায় এক সময় বাধা ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হত না।
“চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীর নির্দেশে আমরা ক্যাম্পাসে পড়ালেখার পাশাপাশি তার চর্চা করতে গিয়েছিলাম।”
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সবাই সেটেলড (প্রতিষ্ঠিত)। ১২ বছর পর হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ‘ভুল’ বুঝতে পেরেছে। এতে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আদর্শিক জায়গা ঠিক রেখে এগিয়ে যাবার জন্য নতুনরা অনুপ্রেরণা পাবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করায় ভালো লাগলেও এ নিয়ে কোনো উচ্ছাস নেই শাহাদত হোসেন শুভর।
“আমার বহিস্কারের বিষয়টি নিয়ে আমার বাবার মৃত্যুর আগেও খুব আফসোস ছিল। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য চেষ্টা করেছিলেন। তৎকালীর উপাচার্যের বিষয়ে ইউজিসির তদন্ত কমিটি বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয় প্রমাণ পেলেও উনি তার মেয়াদ পূর্তি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু আমাদের বহিষ্কার হতে হয়।”