২৭ বসন্ত পর চলে যান তারা


ফাইয়াজ আহনাফ সামিন | Published: February 06, 2023 12:19:18 | Updated: February 06, 2023 18:10:49


২৭ বসন্ত পর চলে যান তারা

খ্যাতি আর তৃপ্তি - অনেকের কাছে এ দু’টি জিনিস একটি আরেকটির পরিপূরক। একটির সাথে আরেকটির সহাবস্থানের কথা জানলেও, আদতে তা বিরল। মানুষ খ্যাতিমান হলেই মনের তৃপ্তি নিয়ে জীবন যাপন করতে পারে, এমন উদাহরণ খুব বেশি নেই। জনপ্রিয়তা, যশ-খ্যাতি এগুলো মনের শান্তি দিতে পারে না। 

এই করুণ সত্যের সবচেয়ে বড় উদাহরণ দেখা যায় বিশ্বের সঙ্গীত জগতে। টুয়েন্টি সেভেন ক্লাব নামক একটি ক্লাব আছে। এই ক্লাবের সদস্যরা সবাই সঙ্গীত জগতের বড় বড় তারকা। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যপার হলো, ক্লাবটির সদস্যরা কেউই আর বেঁচে নেই। ক্লাবটির নাম টুয়েন্টি সেভেন ক্লাব হওয়ার পিছনে এটাই একমাত্র কারণ। যে এই ক্লাবের সদস্য হতে হলে, সবার বয়স হতে হবে ২৭ বছর। ২৭ এই থেমে থাকে তাদের জীবন।

অর্থাৎ ২৭ বছর বয়সে যেসব খ্যাতিমান সঙ্গীত তারকারা মৃত্যুবরণ করেন, তাদেরকে নিয়েই রূপকথার মতো এই টুয়েন্টি সেভেন ক্লাব। 

কোটি কোটি ভক্তের ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও জীবনের এক পর্যায়ে এসে তারকারা হতাশায় ভুগেন। কারণ তারাও রক্ত-মাংসের মানুষ। 

জিমি হেন্ড্রিক্স, কার্ট কোবেইন, জিম মরিসন বা এমি ওয়াইনহাউজ- এরা সবাই খ্যাতির শীর্ষে থাকা অবস্থায় ত্যাগ করেন পৃথিবীর মায়া। কেউ করেন আত্মহত্যা, কারো হয় স্বাভাবিক মৃত্যু বা কারো মৃত্যু ড্রাগ ওভারডোজের কারণে। এই তারকাদের খ্যাতির মৌলিকতা না থাকলেও, কাকতালীয়ভাবে এদের মৃত্যু একই সূত্রে গাঁথা। সবাই মারা যান ২৭ বছর বয়সে। শুনতে অবাস্তব শোনালেও, এটাই সত্যি। এই সারিতে আরো যুক্ত আছেন জ্যানিস জোপলিন, ক্রিস বেইল ও ব্রায়ান জোন্সের মতো তারকারা। 

পপ এন্ড রক কালচারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপকথা হিসেবে ধরা হয় এই টুয়েন্টি সেভেন ক্লাবকে। এমন অদ্ভুত ক্লাব নিশ্চয়ই অন্য কোনো কালচারে নেই, যেখানে সদস্য হতে হলে সবাইকে মৃত হতে হবে ঠিক ২৭ বছর বয়সে। এখানে কেউ দুর্ঘটনায় আবার কেউ স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেন পৃথিবীর মায়া। 

এই ক্লাবের শুরু শুধুমাত্র ২৭ বছর বয়সে মারা যাওয়া নিয়ে হয়নি। ধারণার শুরু হয় ছয়জন তারকা নিয়ে, যারা ছিলেন খ্যাতির শীর্ষে। নিজ নিজ ক্ষেত্রে তারা জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন অল্প সময়ে। লক্ষ লক্ষ ভক্তকূলের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলেন তারা নিজেদের মোহনীয় সংগীত প্রতিভার মাধ্যমে। জিম মরিসন, জিমি হেন্ড্রিক্স, জ্যানিস জোপলিন, ব্রায়ান জোন্স, কার্ট কোবেইন, এমি ওয়াইনহাউজ - এ ছয় সম্ভাবনাময় তরুণের মৃত্যুই বলতে গেলে জন্ম দেয় টুয়েন্টি সেভেন ক্লাবের। শুরুতে তাদের ডাকা হতো ‘দ্য ট্র্যাজিক সিক্স’ নামে। 

কাকতালীয়ভাবে এদের সবার মৃত্যু হয় ঠিক ২৭ বছর বয়সে। তবে যত সময় গিয়েছে, মৃত্যু সংখ্যা আর ছয়ে আটকে থাকেনি। টুয়েন্টি সেভেন ক্লাবের সদস্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। টুয়েন্টি সেভেন ক্লাবের সূত্রপাত হয় ‘দ্য ডোরস’ ব্যান্ডের সদস্য জিম মরিসনের মৃত্যুর মাধ্যমে। তরুণ এ শিল্পী তার নিজস্ব জনরায় ছিলেন সম্ভাবনাময়। কিন্তু তার আকস্মিক মৃত্যুতে বড় ধাক্কা খায় রক এন্ড রোল জনরা।

১৯৭০ এর শুরুর দিকে আমেরিকান সঙ্গীত জগতের চার উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন ঘটে। শুরু হয় দ্য রোলিং স্টোন ব্যান্ডের সদস্য ব্রায়ান জোন্সের মৃত্যু দিয়ে। ড্রাগ আসক্তির কারণে তিনি ব্যান্ডে অনিয়মিত হয়ে পড়েছিলেন। কিছুদিন পর তার লাশ পাওয়া যায় সুইমিং পুলে। এর পরের বছর মারা যান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গিটারিস্ট জিমি হেন্ড্রিক্স। এখনো তাকে সর্বকালের সেরাদের একজন মানা হয়। মাত্রাতিরিক্ত ড্রাগ সেবনের কারণে তিনি মারা যান। জিমির মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পরেই রক এন্ড রোলের রানী বলে পরিচিত জ্যানিস জ্যাপলিন মারা যান। আর তারপর মারা যান জিম মরিসন।

বিশ বছর পরে, ১৯৯৪ সালে মারা যান লাখো তরুণের পথপ্রদর্শক, ৯০ দশকের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী কার্ট কোবেইন। তার ব্যান্ড নির্ভানার গান এখনো মাতিয়ে রাখে শ্রোতাদের বিশ্বব্যাপী। যাকে ধরে নেয়া হয়েছিল রক সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ ঝান্ডাধারী, তার আত্মহত্যার পরপরই জনপ্রিয় হয় ফরেভার ২৭ ধারাটি। আসলে কার্ট কোবেইন এর মৃত্যুর পরেই টুয়েন্টি সেভেন ক্লাবটি রক এন্ড পপ কালচারে দৃঢ় হয়। 

২০১১ সালে ২৭ বছর বয়সে মারা যায় ব্রিটিশ পপস্টার এমি ওয়াইনহাউজ। বিশ্ববাসীর কাছে নতুন করে ফিরে আসে টুয়েন্টি সেভেন ক্লাবের ধারণা।

কার্ট কোবেইন, ছবি: গেটি ইমেজ

এই অল্প কয়জন মানুষ নিয়েই টুয়েন্টি সেভেন ক্লাবের পরিধি নয়। কমপক্ষে ৫০ জন সঙ্গীত শিল্পী ও অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিয়ে এখন এই ক্লাবের চর্চা করা হয়। সঙ্গীত জগতের এই অনন্য ক্লাব নিয়ে চর্চার কোনো কমতি নেই। এ নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক প্রতিবেদন, বই ও নির্মাণ করা হয়েছে ছবি। তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২০১৮ এর মার্চে সুইজারল্যান্ডে আয়োজন করা হয় দা টোয়েনটি সেভেন ক্লাব- লিজেন্ডস নেভার ডাই কনসার্ট।

 

ফাইয়াজ আহনাফ সামিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

faiyazahnaf678@gmail.com

Share if you like