প্যারিসের একটি বিমানবন্দরের টার্মিনালে ১৮ বছর কাটিয়ে দেওয়া ইরানি মেহরান কারিমি নাসেরির মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন বিমানবন্দরটির কর্মকর্তারা।
কূটনৈতিক জটিলতায় আটকা পড়ে নাসেরি ১৯৮৮ সালে হোয়াসি শার্ল দ্যু গল বিমানবন্দরের টার্মিনালে ছোট একটি জায়গাকে নিজের ঘর বানাতে বাধ্য হয়েছিলেন।
পরের ১৮ বছর তিনি ওই টার্মিনালেই ছিলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
এ ঘটনার উপর ভিত্তি করেই নির্মাতা স্টিভেন স্পিলবার্গ তৈরি করেন তার অন্যতম বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘দ্য টার্মিনাল’, সুপরিচিত অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস সেখানে টার্মিনালে আটকা পড়া ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
নাসেরিকে পরে ফ্রান্সে থাকার অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল, তিনি দেশটিতে ছিলেনও।
কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি ফের বিমানবন্দরে এসে আস্তানা গাড়েন, সেখানেই তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয় বলে বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা প্যারিসভিত্তিক একটি বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছেন।
১৯৪৫ সালে ইরানের খুজেস্তান প্রদেশে জন্ম নেওয়া নসেরি তার মাকে খুঁজতে ইউরোপ যান।
তিনি কয়েক বছর বেলজিয়ামে কাটান; কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, জার্মানিসহ অনেকগুলো দেশ তাকে বহিষ্কার করে।
এরপর তিনি ফ্রান্সে যান, সেখানেই বিমানবন্দরের ২এফ টার্মিনালকে বানিয়ে ফেলেন ঘরবাড়ি।
যে বেঞ্চে তিনি থাকতেন, তার চারপাশ ঘিরে থাকা ট্রলিতে কাপড়-চোপড়সহ যাবতীয় জিনিস রাখতেন তিনি। দিন কাটাতেন জীবন সম্বন্ধে নোটবুকে লেখালেখি করে, বই আর খবরের কাগজ পড়ে।
তার এ কাহিনী এক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে আকৃষ্ট করে, পরে স্টিভেন স্পিলবার্গও তা জানতে পারেন এবং নাসেরির জীবনের এই কাহিনী থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে টম হ্যাঙ্কস আর ক্যাথরিন জেটা-জোনসকে নিয়ে বানান ‘দ্য টার্মিনাল’।
চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর বিভিন্ন দেশের অসংখ্য সাংবাদিক টার্মিনালে আটক পড়া এ ইরানির সঙ্গে কথা বলার জন্য ছোটেন প্যারিসের ওই বিমানবন্দরে। এক সময়ে তার চাহিদা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে কোনো কোনো দিনে তাকে ছয়টি সাক্ষাৎকারও দিতে হয়েছে।
নাসেরি নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতেন ‘স্যার আলফ্রেড’ নামে।
ফ্রান্স ১৯৯৯ সালে নাসেরিকে শরণার্থীর মর্যাদা এবং দেশটিতে থাকার অনুমতি দিয়েছিল; তা সত্ত্বেও ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিমানবন্দরেই ছিলেন নাসেরি। অসুস্থ হওয়ায় ওই বছর তাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
‘দ্য টার্মিনাল’ ছবি থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে পরে বেশ কিছুদিন তিনি একটি হোস্টেলে ছিলেন বলে জানিয়েছে ফরাসী খবরের কাগজ লিবারেশন।
কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি ফের বিমানবন্দরে ফেরেন, এবং শেষ পর্যন্ত সেখানেই মারা যান। এ সময় তার কাছে কয়েক হাজার ইউরো পাওয়া যায়, বলেছেন বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা।