যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃতুদণ্ড কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদেরকে দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যেতে বললেন সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ত্রি বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, "একটি অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ধর্মভিত্তিক দেশ হবে না, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দেশে চলবে না। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে আমরা অনেক দূরে চলে গেছি।
"বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশ উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এদেশকে পাকিস্তান বানানোর কাজ শুরু করে। জিয়া, গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে এনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। জিয়ার পর এরশাদ এসে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করল। আর তারপর জিয়ার স্ত্রী খালেদা, এরা সবাই মিলে এদেশে ধর্মান্ধতা প্রতিষ্ঠা করে।"
ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "ধর্মান্ধ, ধর্ম ব্যবসায়ীরা ওয়াজ মাহফিলের নামে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের কথায় সম্প্রীতির কথা থাকে না, মানবিকতার কথা থাকে না। নারীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। তাদের কথায় থাকে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি-সহিংসতা।“
বিচারপতি মানিক বলেন, "ক’দিন আগে চট্টগ্রামে কুখ্যাত রাজাকার সাকা চৌধুরীর ছেলে বলল- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নাকি ক্ষমা চাইতে হবে। হে সাকা পুত্র- তুমি পাকিস্তানে চলে যাও। এ দেশ তোমার না।
"নওগাঁর জেলা জজ হাসান মাহমুদুল ইসলাম বলেছেন, মালাউনরা হারলে আমি খুশি হই। অবিশ্বাস্য। প্রশাসন, পুলিশ, নিম্ন আদালতে রাজাকার-আলবদরে ভরে গেছে। সরকার অনেককে সরিয়ে দিয়েছে। অন্যদেরও সরাতে হবে।"
কাজী নজরুল ইসলাম, লালন, রবীন্দ্রনাথের দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো জায়গা থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক জিনবোধি ভিক্ষুর অভিযোগ, "সংখ্যালঘুদের জমি দখল করছে, ভিটেও ছাড়া করছে। সংখ্যালঘু নিপীড়ন নির্যাতনের বিচার কী আমরা পাচ্ছি?”
জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্দু নন্দন দত্ত বলেন, "এদেশের সকল আন্দোলনে আমরা ছিলাম। বারবার বলেছি আমরা বাঙালি। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী বলছে তোমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান। এখনও বলছি আমরা বাঙালি হতে চাই। নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।“
সম্মেলন উদ্বোধন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক। প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। অতিথি ছিলেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত ও দক্ষিণ জেলার সভাপতি তাপস হোড়।
সংগঠনের নগর শাখার সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী শুভ্র দেব কর, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সসদ্য উত্তম কুমার শর্মা।
সম্মেলন শেষে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রোড মার্চ শুরু হয়। রোড মার্চ উদ্বোধন করেন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা।