নিম্ন আদালতে চার দফা নাকচ হওয়ার পর হাই কোর্ট থেকে জামিনে পেলেন নয়া পল্টনে সংঘর্ষের মামলায় কারাবন্দি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দীন খানের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার শুনানি শেষে তাদের ৬ মাসের জামিন দেন।
ছয় মাসের জামিনের পাশাপাশি নিয়মিত জামিন কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে হাই কোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
আইনজীবীদের মাধ্যমে সোমবার জামিনের আবেদন হাই কোর্টে জমা দিয়েছিলেন বিএনপির এ দুই শীর্ষ নেতা। তাদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তার সঙ্গে ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী, কায়সার কামাল, মো. রুহুল কুদ্দুস ও সগীর হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর।
অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, “আদালত শুনানি করে দুইজনকে ৬ মাসের জামিন দিয়েছেন। তাদের মুক্তিতে এখন কোনো বাধা নেই।”
অন্যদিকে জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করা হবে জানিয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর সাংবাদিকদের বলেন, “এ জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করা হবে।”
এর আগে ঢাকার হাকিম আদালতে তিন বার এবং জজ আদালতে একবার মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যায়।
ঢাকায় বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে ৭ ডিসেম্বর নয়া পল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পরদিন ৮ ডিসেম্বর রাতে উত্তরার বাসা থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও শাহজাহানপুরের বাসা থেকে মির্জা আব্বাসকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। পরে তাদেরকে পল্টন থানায় নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের জামিন নামঞ্জুর করেন মহানগর দায়রা জজ মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে তিন দফা ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে।
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ও স্থান নির্ধারণ নিয়ে উৎকণ্ঠা-উত্তেজনার মধ্যে ৭ ডিসেম্বর নয়া পল্টনে জমায়েত হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু ও শতাধিক আহত হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে হাতবোমা ছোড়া হয়েছে অভিযোগ তুলে তখন ওই কার্যালয়ের ভেতরে অভিযান চালায় পুলিশ, গ্রেপ্তার করা হয় কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাসহ কয়েকশ নেতা-কর্মীকে।
পরদিন রাতে বাড়ি থেকে মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়, একই রাতে গ্রেপ্তার করা হয় মির্জা আব্বাসকেও।
পরদিন ৯ ডিসেম্বর পুলিশের উপর হামলা ও উস্কানি দেওয়ার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঠানো হয় আদালতে। তাদের পক্ষে জামিন আবেদন হলেও তা নাকচ করে পাঠানো হয় কারাগারে।
সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন, মতিঝিল, শাহজাহানপুর ও রমনা থানায় চারটি মামলা করে পুলিশ। সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার নেতকর্মীকে আসামি করা হয় সেসব মামলায়।
তাদের মধ্যে ৭২৫ জনের নাম মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছিল, ওই তালিকায় মির্জা ফখরুল বা মির্জা আব্বাসের নাম ছিল না।