Loading...
The Financial Express

সড়কে ‘আট বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু’ দেখেছে ২০২২

| Updated: January 03, 2023 09:13:43


সড়কে ‘আট বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু’ দেখেছে ২০২২

গেল বছর দেশে ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জনের প্রাণ ঝরে গেছে বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংগঠনটি জানিয়েছে, ২০২২ সালে এসব সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১২ হাজার ৩৫৬ জন। সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ওই সংখ্যা গত আট বছরের সর্বোচ্চ।

একই সময় রেলপথে ৬০৬ টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত, ২০১ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ২৬২ টি দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জন নিহত এবং ৩৫৭ জন আহত হয়েছে। নৌ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ৭৪৩ জনের কোনো সন্ধান এখনও মেলেনি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

সব মিলিয়ে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ৭ হাজার ৬১৭ টি দুর্ঘটনায় ১০ হাজার ৮৫৮ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের বার্ষিক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত দুর্ঘটনার সংবাদ থেকে সংকলন করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

মোজাম্মেলন বলেন, ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তাতে মৃত্যু ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত ৮ বছরের মধ্যে ২০২২ সালেই সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে জানিয়ে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এই সময়ে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আদালতের আদেশ অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলাচলকে দুর্ঘটনা বাড়ার একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

 

তাদের বার্ষিক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে–

  • ২০২২ সালে সড়কে যারা দুর্ঘটনায় পড়েছেন, তাদের ৩ হাজার ৯০ জন চালক, এক হাজার ৫০৩ জন পথচারী, ৭৪২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮৮৫ জন শিক্ষার্থী, ১৩২ জন শিক্ষক, ২৮৩ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, এক হাজার ১৫০ জন নারী, ৭৯৪ জন শিশু, ৪৪ জন সাংবাদিক, ৩১ জন চিকিৎসক, ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা, ৫ জন শিল্পী, ৯ জন আইনজীবী ও ২৯ জন প্রকৌশলী এবং ১৬৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
  • ৯ হাজার ৬১৬টি দুর্ঘটনার মধ্যে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে বাস, ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ৬ দশমিক ২২ শতাংশ অটোরিকশা, ২৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৮ দশমিক ৩২ শতাংশনছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা ও লেগুনা দুর্ঘটনায় পড়েছে।
  • এসব দুর্ঘটনার ২৭ দশমিক ৭০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৫২ দশমিক ২ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ ফিডার রোডে ঘটেছে।
  • সারা দেশে হওয়া মোট দুর্ঘটনার ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, এক দশমিক ৭১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে হয়েছে।
  • এক দিনে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয়েছে ১৫ জুলাই, সেদিন ৩৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত ও ৯৭ জন আহত হয়েছেন। আর সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ৬ সেপ্টেম্বর, সেদিন ৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে।
  • সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে ২৯ জুলাই, সেদিনে ২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪ জন নিহত এবং ৮৩ জন আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ বলছে, বেপরোয়া গতি, বিপদজনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি, রাস্তার পাশে হাট-বাজার, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো, মালিকের অতিরিক্ত মুনাফার মানসিকতা, চালকের নিয়োগ ও কর্মঘন্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা, দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থা সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।

প্রতিবেদনে বরাবরের মতই কিছু সুপারিশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

>> সড়ক নিরাপত্তায় বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা।

>> আইনের ত্রুটি চিহ্নিত করে সংস্কারপূর্বক ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ ও বিধিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা।

>> সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে আলাদা সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট গঠন করা।

>> সড়ক নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া।

>> দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রা ক্রসিং অঙ্কন করা।

>> গণপরিবহন চালকদের পেশাদার ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

>> সড়ক পরিবহন খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা।

>> গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা।

>> সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠন করে হতাহতদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

>>দেশব্যাপী চাহিদানুযায়ী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন গণপরিবহন নামানোর উদ্যোগ নেওয়া।

>> ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তোলা।

>> গণপরিবহনে সেবা ও নিরাপত্তার মান পর্যবেক্ষণের জন্য মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সচিব, জেলা প্রশাসকদের প্রতিমাসে একদিন পরিচয় গোপন রেখে গণপরিবহন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা।

>> পরিবহনের প্রধান স্টেকহোল্ডার মালিক, শ্রমিক, যাত্রী, সরকার হলেও দীর্ঘদিন ধরে এই খাতে ভাড়া নির্ধারণ, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণসহ যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিক-সরকার মিলেমিশে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়কে দুর্ঘটনা বেপরোয়া হারে বাড়ছে।

সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সেইফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট এলায়েন্সের চেয়্যারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এবং গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আবদুল হক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

Share if you like

Filter By Topic