সহকর্মীকে এসিড নিক্ষেপ করে পালিয়ে থাকার ২৪ বছর পর যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
চাঁদপুরের শাহরাস্তির মেহের স্টেশন রোড থেকে শুক্রবার কামাল হোসেন নামের ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে, থাকতেন শাহরাস্তি এলাকায়।
শনিবার চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ জানান, ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে একটি রিফ্রেজেরেটরের দোকানে কাজ করার সময় সহকর্মীর মুখে এসিড নিক্ষেপ করে পালিয়ে ছিলেন কামাল। গত ২৪ এপ্রিল চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত তাকে এসিড নিক্ষেপের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছিল।
তিনি জানান, এসিড নিক্ষেপের পর কামাল চাঁদপুর, লক্ষীপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে থাকা আটটি মামলায় দুই দফায় প্রায় আট বছর কারাগারে থাকলেও এসিড নিক্ষেপের মামলাটি গোপন রেখেছিলেন। এমনকি এটি তার পরিবারের সদস্যরাও জানতেন না।
সংবাদ সম্মেলন জানানো হয়, গ্রেপ্তার কামালের ওই সহকর্মী একটি রিফ্ররেজেরেটরের মেরামতের দোকানে কাজ করতেন। কোরআনে হাফেজ ওই সহকর্মী শিশুদের আরবি পড়াতেন, যাদের মধ্যে মালিকের সন্তানরাও ছিলেন।
র্যাব ৭ অধিনায়ক জানান, দোকান মালিক তাদের দুই জনেরই পারিবারিকভাবে পরিচিত ছিল। কিন্তু মালিক তার সহকর্মীকে বেশি পছন্দ করায় তা ক্ষোভের জন্ম দেয় কামালের মধ্যে। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তর্ক বিতর্কও হত।
তিনি জানান, ওই মালিক দোকান বিক্রির কথা ভাবলে ওই সহকর্মী তা কিনে নেওয়ার আগ্রহ দেখান। যেটি নিয়ে কামাল আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয় এবং ১৯৯৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এসিড নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। এর আগের দিন দোকানে দুইজনের মধ্যে আরেক দফা ঝগড়ার পর জরুরি কথা আছে বলে বাসা থেকে ডেকে এনে এসিড ছোঁড়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এ আসামি। এমনকি শরীরে আগুনও লাগিয়ে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘটনার পর এসিডদগ্ধ ওই যুবককে মৃত ভেবে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। সেখানে এক পুলিশ সদস্য শ্বাস প্রসাস আছে দেখে তাকে দ্রুত পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসার এক পর্যায়ে আয়নায় নিজের মুখ দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং ৩০ দিন কোমায় ছিলেন। পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সুস্থ হয়ে উঠার কয়েক বছর পর সে সৌদি আরবে চলে যান, বর্তমানে সেখানেই আছেন তিনি।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ডবলমুরিং থানায় মামলা করেছিলেন।
এসিড নিক্ষেপের পর কামাল প্রথমে নিজ গ্রাম ফরিদগঞ্জে গিয়ে একটি স্টুডিওতে ছবি তোলা ও ভিডিও করার কাজ নেয়। পরে বালুর মহলে ও কৃষি কাজও করেছিলেন। একসময় ঢাকায় গিয়ে আড়তে চাকরিও নিয়েছিলেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।