ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ায় দেশের সব সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
শুক্রবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “ডেঙ্গুর সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়েছে।”
ডেঙ্গুর চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো ঘাটতি নেই দাবি করে ডা. খুরশীদ আলম বলেন, “ডেঙ্গু পরিস্থিতি কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে, তা ভালো বলতে পারবেন কীটতত্ত্ববিদরা। তবে চিকিৎসার দিক থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো ঘাটতি নেই। উপজেলা-জেলা পর্যায়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। ডেঙ্গু পরীক্ষার ফল সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।”
প্রাথমিক পর্যায়ে ডেঙ্গু শনাক্ত না হওয়ায় এবং হাসপাতালে দেরিতে আসায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তিনি বলেন, “উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একসঙ্গে কাজ করছে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর দেশে ৪১ হাজার ৪৮১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের ১৬২ জন মারা গেছেন। অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ ২১ হাজার ৯৩২ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন, এ মাসে রেকর্ড ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আরও ৪৯৮ রোগী হাসপাতালে
গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের।
এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ৮৮২ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। আর মৃত্যু হয়েছিল নয় জনের, যা এ বছরে একদিনে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ঢাকায় ৩২৫ জন ও ঢাকার বাইরে ১৭৩ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
নতুন রোগীদের নিয়ে বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩ হাজার ৬৬০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ২ হাজার ২৩২ জন ও ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৪২৮ জন ভর্তি রয়েছেন।
এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৪১ হাজার ৪৮১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৩৭ হাজার ৬৫৯ জন।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ১৬২ জনের মধ্যে নভেম্বরের প্রথম চারদিনে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের, অক্টোবরে ৮৬ জনের, সেপ্টেম্বরে ৩৪ জনের, অগাস্টে ১১ জনের, জুলাইয়ে ৯ জনের এবং জুন মাসে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
সেপ্টেম্বরে ৯ হাজার ৯১১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, অগাস্টে ভর্তি হয়েছিলেন ৩ হাজার ৫২১ জন। অক্টোবরে ২১ হাজার ৯৩২ জন, আর নভেম্বরে ৩ হাজার ৪৫৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সরকারি হিসাবে সেবার মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের।
মাঝে এক বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম থাকলেও ২০২১ সালে ফের ৫৮ জেলায় ডেঙ্গু ছড়ায়। তাতে ২৮ হাজার ৪২৯ জন এ রোগ নিয়ে হাসপাতালে যায়, মৃত্যু হয় ১০৫ জনের।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হন, কেবল তাদেরই তথ্য আসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে। আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হননি, এমন ব্যক্তিরা সরকারের হিসাবের বাইরেই থেকে যান।