সবাই বিদ্যুৎ পাবে, সাশ্রয়ীও হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী


FE Team | Published: October 19, 2022 18:52:26 | Updated: October 20, 2022 14:20:58


সবাই বিদ্যুৎ পাবে, সাশ্রয়ীও হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও দেশে বিদ্যুৎ সরাবরাহ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে আবারও মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে বর্তমান বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ঢাকায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাবনার ঈশ্বরদীতে মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত হন সরকারপ্রধান। রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকটের কারণে জ্বালানি খাতে কঠোরতা দেখাতে সরকার বাধ্য হয়েছে, তারপরও সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখবে।

“আমাদের যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা এবং করোনাভাইরাসের কারণে মিতব্যয়ী হতে হচ্ছে, কারণ আমদানির ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থায় মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি চলছে।“

তিনি বলেন, “আমাদের কিছুটা সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে, তার মানে এই নয় দেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাবে না। সকলে বিদ্যুৎ পাচ্ছে এবং পাবে। তবে এক্ষেত্রে সবাইকে একটু মিতব্যয়ী হতে হবে।”

উন্নত বিশ্বের সংকটের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ছিল সবাইকে বিদ্যুৎ দেওয়া এবং আমরা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরেছি। প্রতিটি ঘরে আলো জ্বেলে সমগ্র বাংলাদেশকে আমরা আলোকিত করেছি।

“আজকে উন্নত দেশগুলোও হিমসিম খাচ্ছে এবং তারাও সাশ্রয়ের দিকে নজর দিয়েছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “প্রত্যেকেরই উপলব্ধি করা উচিত যে বিশ্ব একটি গ্লোবাল ভিলেজ এবং একে অন্যের ওপর উপর নির্ভরশীল। ফলে বিশ্বের মন্দার অভিঘাত বাংলাদেশে পড়া স্বাভাবিক।”

এর আগে গত বছরের ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী প্রথম ইউনিটের চুল্লী উদ্বোধন করেছিলেন। সব ঠিক থাকলে প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৩ সালে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে জাতীয় গ্রিডে। আর ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক সংকটের কারণে অনেক উন্নত দেশে এবং খাদ্যের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও এই ধরনের পরিস্থিতি বাংলাদেশে এখনও সৃষ্টি হয়নি।

“আমরা জনগণকে খাদ্য নিরাপত্তা দিচ্ছি। আমরা ন্যায্যমূল্যে খাবার কেনার জন্য এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড দিয়েছি এবং যারা প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে অক্ষম তাদের বিনামূল্যে খাবার দিচ্ছি।”

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে তার সরকার আত্মবিশ্বাসী, কারণ সরকার কোভিড-১৯ মহামারীর চ্যালেঞ্জও ‘সফলভাবে’ অতিক্রম করেছে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঝুঁকির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে অনেক কথা’ বললেও নিরাপত্তাকেই তার সরকার প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে চেরনোবিলের মতো কোনো পারমাণবিক দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ফলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।

দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আজকে বাংলাদেশের জন্য বিরাট অর্জনের দিন। এটা আমাদের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত সম্মান বয়ে আনবে।

“রূপপুর কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ আসবে, সেটা উত্তরবঙ্গের জন্যই ব্যবহার হবে। তারাই লাভবান হবে বেশি। সেখানে শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে।”

তিনি বলেন, “রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্র না, এটা একটা দৃষ্টান্ত, আমরা এ ধরনের একটা কাজ করতে পারি। পরিবেশ ঠিক রেখে আমরা ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাচ্ছি। যা আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখবে।”

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সহায়তার জন্য রাশিয়ার সরকার ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, রাশিয়ার পরমাণু শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

স্বাগত বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জিয়াউল হাসান। অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। à¦–বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের। 

Share if you like