হার দিয়ে শুরুর পর যেন অজেয় হয়ে উঠেছে শ্রীলঙ্কা। আশা জাগিয়েছে, এশিয়া কাপের সফলতম দল ভারতের সঙ্গে ব্যবধান কমানোর। পাকিস্তানেরও শুরুটা হার দিয়ে। লঙ্কানদের মতো বাবর আজমের দলও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জায়গা করে নিয়েছে শিরোপা লড়াইয়ের মঞ্চে। তাদের সামনে প্রতিযোগিতাটির তৃতীয় শিরোপার হাতছানি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে রোববার ফাইনালে মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায়।
এবারের আসর হওয়ার কথা ছিল শ্রীলঙ্কায়। তবে দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আর্থিক সঙ্কটের জন্য টুর্নামেন্ট সরিয়ে নেওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। কঠিন সময়ে দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটানোর মতোই ক্রিকেট খেলছেন কুসল মেন্ডিস, মাহিশ থিকসানারা।
শুরুটা ছিল অবশ্য খুব হতাশার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে স্রেফ ১০৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ছোট পুঁজি নিয়ে ন্যুনতম লড়াই করতে না পেরে হেরেছিল ৮ উইকেটে।
এরপরই ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা। পরপর দুই ম্যাচে গড়ে রান তাড়ার রেকর্ড।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের সর্বোচ্চ রান তাড়া করার কীর্তি গড়ে হারায় বাংলাদেশকে। আর সুপার ফোরে প্রথম ম্যাচে শারজাহতে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে হারায় আফগানিস্তানকে, নেয় মধুর প্রতিশোধ। সুপার ফোরের পরের দুটি লড়াইয়েও রান তাড়ায় সফল দ্বীপ দেশটি; হারিয়ে দেয় ভারত ও পাকিস্তানকে।
ভারতের বিপক্ষে হার দিয়ে আসর শুরু হলেও সুপার ফোরে যাওয়ার লড়াই এতটা কঠিন ছিল না পাকিস্তানের জন্য। বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসা হংকংকে গুঁড়িয়ে টুর্নামেন্ট টিকে থাকে বাবর আজমের দল।
এরপর সুপার ফোরে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ভারতকে হারানোর পর পাকিস্তান নাসিম শাহর দুই ছক্কায় নাটকীয় জয় পায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে। বাবরদের ওই জয়েই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায় আফগানিস্তান ও ভারত। আবারও ভেঙে যায় এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে ভারত ও পাকিস্তানের ফাইনালে আশা।
১৯৮৪ সালে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টে একটি করে আসরে খেলেনি ভারত ও পাকিস্তান। গাণিতিকভাবে ১৩ আসরে তাদের ফাইনালে মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। বিস্ময়করভাবে একটিতেও তা হয়নি! তাদের মধ্যে একটি দল অবশ্য প্রতিটি ফাইনালে ছিল। কখনও তাদের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা, কখনও বাংলাদেশ।
এশিয়া কাপে পাকিস্তানের অর্জন ততটা সমৃদ্ধ নয়। কেবল পঞ্চমবারের মতো খেলছে ফাইনালে। একমাত্র দল হিসেবে সব আসরে খেলা শ্রীলঙ্কার এটি দ্বাদশ ফাইনাল। তাদের পাঁচ শিরোপার সবশেষটি জিতেছিল পাকিস্তানকেই হারিয়ে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে। সেই শিরোপা তাদের বসিয়েছিল ভারতের পাশে। পরের দুই আসরে জিতে ব্যবধান বাড়িয়ে নিয়েছে ভারত। ১০ বার ফাইনালে খেলা ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রেকর্ড সাতবার।
ফাইনালের আগের দিন কোনো দলেরই অনুশীলন ছিল না। ছিল না সংবাদ সম্মেলনও। শিরোপার লড়াইয়ে নিয়ে দুই দলের ভাবনা তাই খুব একটা জানা যায়নি। লঙ্কান অধিনায়ক শানাকা সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় জানালেন, পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে উন্মুখ হয়ে আছেন তারা।
“দল হিসেবে আমরা ফাইনালে খেলতে খুবই রোমাঞ্চিত। পাকিস্তান খুব ভালো একটি দল। টুর্নামেন্টের সব ম্যাচই ছিল নখ কামড়ানো উত্তেজনার। আমরা ফাইনালের জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছি। পেছন ফিরে তাকালে মনে হয়, এটা আমাদের সেরা এশিয়া কাপের একটি। আমরা ফাইনালের দিকে তাকিয়ে আছি।”
ব্যাট হাতে আসর খুব একটা ভালো কাটছে না বাবর আজমের। টানা ব্যর্থতায় হারিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান। তবে অধিনায়ক হিসেবে উপভোগ করছেন দারুণ।
“অধিনায়ক হিসেবে কোনো দলকে ফাইনালে নেতৃত্ব দেওয়া রোমাঞ্চকর। আমরা এখন ট্রফি জয়ের লক্ষ্য পূরণ থেকে কেবল এক ধাপ দূরে। সব অধিনায়ক আর দলই শিরোপা জিততে চায়। দল হিসেবে আমাদের লক্ষ্য, ভালো করা এবং শিরোপা জেতা।”
“আসরে পেছন ফিরে তাকালে দেখি, আমরা কিছু দারুণ ম্যাচ খেলেছি, কিছু দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাও ছিল। আমরা অসাধারণ কিছু পারফরম্যান্স করেছি এবং ভিন্ন ভিন্ন খেলোয়াড় আলো ছড়িয়েছে এবং ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছে।”
দুই দলেই আছে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়ার মতো খেলোয়াড়। সামর্থ্যের ঝলক এই টুর্নামেন্টে দেখিয়েছেনও তারা। তবে অন্য সব ম্যাচের মতো ফাইনালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে টস। গত কিছু দিনে হংকং ও স্কটল্যান্ড ছাড়া আর সব দলই এই মাঠে জিতেছে রান তাড়া করে।