শান্তির পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে বিশ্বে যাতে আর যুদ্ধ-সংঘাতে না হয় সেই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় ‘১৯তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ’ এর উদ্বোধন করে তিনি বলেছেন, “মানুষের যে কষ্ট, মানুষের যে দুঃখ-যন্ত্রণা এবং যুদ্ধের যে ভয়াবহতা সেটাও শিল্পীর আঁচড়ে উঠে আসবে, যাতে করে এই ধরনের যুদ্ধ আর না হয়।”
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন শেখ হাসিনা। ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্বের মানুষকে যে দুর্দশায় ফেলে দিয়েছে, সে প্রসঙ্গ আসে তার বক্তৃতায়।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “আমরা সব সময় শান্তি চাই। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হল একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি। একদিকে করোনা মহামারী আরেক দিকে হচ্ছে ইউক্রেইন রাশিয়া যুদ্ধ, যেটা আসলে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। পৃথিবীর মানুষ যেন শান্তিতে বাস করতে পারে এবং মানুষের জীবন মান যাতে উন্নত হয় সেটাই আমরা চাই।”
তিনি বলেন, শিল্প সংস্কৃতি যে কোনো জাতির আত্মপরিচয় বহন করে। শিল্পীর তুলির আঁচড়েই উঠে আসে একটি দেশ ও জাতির রাজনৈতিক অবস্থান, তাদের সাংস্কৃতিক অবস্থান বা প্রাকৃতিক পরিবেশ। মানুষের চেতনাকে তা ঋদ্ধ করে।
“আমাদের যে সংগ্রাম সেই মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, সেই সংগ্রামও প্রাণ পেয়েছিল শিল্পীর আঁচড়ে এবং আমাদের শিল্পীরা তখন বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের স্বাধীকার আন্দোলন সেই আন্দোলনে সবসময়ই আমাদের শিল্পীরা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
“আমাদের শিল্পীদের তুলির আঁচড়েই উঠে এসেছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ঋতু বৈচিত্র্য। যে কোনো অন্যায় অবিচারে বিরুদ্ধে যখন আমাদের দেশের মানুষ সংগ্রাম করেছে সেই প্রতিবাদের ভাষাও আরও সমৃদ্ধি লাভ করেছে, মানুষের চেতনাকে শাণিত করেছে শিল্পীর তুলির আঁচড়ে।”
মাসব্যাপী দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে ১১৪টি দেশের ৪৯৩ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করছেন। তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “আপনারা কষ্ট করে আমাদের এই সুজলা, সুফলা সুন্দর বাংলাদেশে এসেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আপনারা এখানে আসার ফলে এই যে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধরনের যে সংস্কৃতি বা চিত্রকর্ম অথবা তাদের মনের বিকাশের যে সুযোগ, আমাদের দেশের মানুষও এটা থেকে অনেক জ্ঞান আহরণ করতে পারবে, একে অপরকে জানতে পারবে, একে অপরের শিল্পী মনকে জানতে পারবে।
“তুলির আঁচড়ে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি যে বিকশিত হয় সেটা সম্পর্কে জানতে পারবেন। যেটা আমি মনে করি আমাদের শিল্পীদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধশালী করবে। আরও নতুন নতুন চিন্তা চেতনার ধারা নিয়ে আসবে।”
সংস্কতি চর্চায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “স্বাধীনতার পর দেশীয় শিল্প সংস্কৃতি চর্চা এবং বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে তিনি (বঙ্গবন্ধু) বাংলাদেশ শিল্প একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। আজকে আমাদের শিল্প একাডেমি প্রায় সারা বাংলাদেশে আমরা প্রতিষ্ঠা করে আমাদের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে সমস্ত মানুষ পড়ে আছে সংস্কৃতিমনা, তাদের সেই শিল্পী মনন, জ্ঞান এবং তাদের যে সক্ষমতা সেটাও যাতে আমরা আমাদের মানুষের সামনে বিকশিত করতে পারি তার জন্য আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
দেশের সংস্কৃতি চর্চায় ওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে দলের সভানেত্রী বলেন, “আমরা ৬৪ জেলায় শিল্পকলা একাডেমির নতুন ভবন তৈরি করে দিয়েছি। ৪৯৩টি উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমি স্থাপন করা হয়েছে।
“অর্থাৎ আমরা আমাদের এই সংস্কৃতি সেবাটা একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চাই। একদিকে তাদের যেমন আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করছি পাশপাশি তাদের শিল্প মনের বিকাশও যাতে হয় সেই পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।”
দেশি-বিদেশি চিত্রকর্ম সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা, চারুকলা, সংগীত, নৃত্য, নাটক, চলচ্চিত্র, ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত বা লোকসংস্কৃতি উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি আছে। সেটাও যাতে বিকশিত হয় সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছি এবং আমরা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করছি।”
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।