শব্দ দূষণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৪২ শতাংশ রিকশাচালকের শ্রবণজনিত সমস্যায় ভোগার তথ্য উঠে এসেছে এক জরিপে।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের জরিপে এ ফল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন গবেষণা দলের প্রধান ড. সাইকা নিজাম। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইব্রাহিম অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এ বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজশাহী, কুমিল্লা এবং সিলেট সিটি করপোরেশনে একটি জরিপ চালানো হয়।
তাতে দেখা যায়, রিকশাচালকের পাশাপাশি ৩১ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ, ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ অটোরিকশা চালক, ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ দোকানদার, ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ বাস-ট্রাক চালক, ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাইভেটকার চালক এবং ১২ দশমিক ৫ শতাংশ মোটরসাইকেল চালকও শ্রবণজনিত সমস্যায় ভুগছেন।
‘বাংলাদেশের রাজপথে শব্দদূষণ এবং শব্দদূষণের কারণে রাজপথে কর্মরত পেশাজীবীদের শ্রবণ সমস্যা’ শীর্ষক এই জরিপে সবচেয়ে বেশি সমস্যার কথা এসছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায়।
সেখানে ৫৫ শতাংশ পেশাজীবীর শব্দদূষণের কারণে সমস্যায় ভোগার কথা বলেছেন। আর সিলেটে ৩১ শতাংশ, ঢাকায় ২২ দশমিক ৩ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৪ শতাংশ পেশাজীবী শব্দদূষণে ভোগার কথা জানিয়েছেন।
জরিপের ফল উপস্থাপনের অনুষ্ঠানে বলা হয়, সমস্যার ব্যাপ্তি বুঝতে সড়কে বিভিন্ন পেশার ৬৪৭ জনের শ্রবণশক্তি পরিমাপ করা হয়। এর মধ্যে ১৯২ জন ট্রাফিক পুলিশ, ৭৪ জন রিকশাচালক, ১৩৪ জন অটোরিকশা চালক, ৫৯ জন দোকানদার, ১২২ জন ট্রাক-বাসের চালক ও হেলপার, ৩৪ জন ব্যক্তিগত গাড়ির চালক এবং ৩২ জন মোটরসাইকেল চালক রয়েছেন।
সাইকা নিজাম বলেন, তাদের গবেষণায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় শব্দের গড় মাত্রা ৯৬ দশমিক ৩ ডেসিবল, দক্ষিণ সিটিতে ৯৪ দশমিক ১ ডেসিবল, সিলেট সিটি করপোরেশনে ৮৯ দশমিক ৯ ডেসিবল, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ৯০ দশমিক ৩ ডেসিবল এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ৯১ দশমিক ৬ ডেসিবল পাওয়া যায়।
সড়কে শব্দ দূষণের মাত্রা নির্ণয় এবং সড়কে পেশাজীবীদের শ্রবণশক্তির ওপর শব্দদূষণের প্রভাব নির্ণয়ে এই গবেষণা চালানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
এই গবেষক বলেন, “জরিপে অংশ নেওয়াদের প্রতি চারজনের একজন কানে কম শোনার সমস্যায় ভুগছেন। সমস্যায় আক্রান্তদের ৭ শতাংশের শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র (কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট) ব্যবহার জরুরি।”
সমস্যা গুরুতর হলেও শব্দদূষণকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না মন্তব্য করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন অনুষ্ঠানে বলেন,“এটি বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। গবেষণায় এমন চিত্র উঠে আসবে তা ভাবিনি।
“বয়স বাড়লেই মানুষ ধীরে ধীরে কানে কম শুনতে শুরু করে। কানে না শোনার নানা কারণও থাকতে পারে। শুধু রাস্তায় নয়, বাসা-বাড়ির আশপাশে গড়ে ওঠা ভবনেও দায় রয়েছে। এ জন্য আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকেও একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”