বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের হিসাব পদ্ধতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণ আবেদন নিয়ে বৈঠকে বসে ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দল। এদিন সকাল ও বিকাল মিলে বেশ কয়েকটি বৈঠক হওয়ার কথা।
দিনের প্রথমভাগের বৈঠকেই রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি আলোচনায় উঠে আসে, যেটি ‘ফলপ্রসূভাবে’ এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
একই সঙ্গে সংস্থাটির কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার বিষয়টি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেও নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
মধ্যাহ্ন বিরতির আগে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোর বিষয়ে দুপুর ২টার পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের আলোচনা ফলপ্রসূ হচেছ, তা সন্তোষজনক চলছে।’’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভের যে তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করে আসছে সেটি নিয়ে বছর খানেক আগে থেকে প্রশ্ন তুলে আসছে আইএমএফ।
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে রিজার্ভ হিসাবের কথা বলে আসছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের মত করে এ হিসাব করছে; যাতে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলসহ (ইডিএফ) আরও কয়েকটি তহবিলে জোগান দেওয়া অর্থকেও অর্ন্তভূক্ত করে রাখছে।
আইএমএফ যেকোনো দেশের রিজার্ভ হিসাবের বেলায় বিপিএম ৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। এতে রিজার্ভের প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য তহবিলই প্রকাশ করার কথা বলা হয়েছে।
এ পদ্ধতি অনুসরণ করে হিসাব করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত রিজার্ভের চেয়ে তা অনেক কম হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠিত ইডিএফে সরবরাহ করা হয়েছে প্রায় ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ বিমান, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়া শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এজন্য মোট দেওয়া হয়েছে প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফর হিসাবে এই পরিমাণ অর্থ রিজার্ভের হিসাবে থাকার কথা নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ হচ্ছে ৩৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের হিসাব মানলে এ থেকে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের মত।
এছাড়া ২০১৬ সালে হ্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থের মধ্যে ফেরত না আসা অংশটুকু এখনও রিজার্ভে দেখাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এবারের সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শুরু এ আলোচনার সূচিতে রিজার্ভের হিসাব ব্যবস্থাপনায় ‘বিপিএম৬’ হিসাব পদ্ধতি পরিপালনের এ বিষয়টিই তুলেছে আইএমএফ।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রিজার্ভের নিট ও গ্রস দুটো হিসাবেই প্রকৃত পরিমাণের তথ্য জানতে চায় প্রতিনিধি দলটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়।
২০২১ সালে রিজার্ভ হিসাবের পদ্ধতি নিয়ে আইএমএফ প্রশ্ন তোলার পর সেটি নিয়ে করণীয় ঠিক করতে একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদে তোলা হয়েছিল। তবে পর্ষদ আইএমএফের পরামর্শ গ্রহণ না করে নিজেদের মত করেই রিজার্ভ হিসাব করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রথম দিনের অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আজাদ জানান, আলোচনা চলবে। দেড় বিলিয়ন করে মোট সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার বিষয়টি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
আন্তর্জাতিক এ সংস্থার সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দীর্ঘ আলোচনায় অনেক বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক, মুদ্রার বিনিময় হার ও আগামী তিন অর্থবছরে এর প্রভাব, সাম্প্রতিক মুদ্রানীতির হালনাগাদ তথ্য, ব্যাংকিং ইস্যু, সুদহার, খেলাপি ঋণ, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট, অর্থনীতির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিভিন্ন নীতি সংস্কার।
ঢাকায় আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সফরের দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার সকালে তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার তিনি ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, একেএম সাজেদুর রহমান ও কাজী ছাইদুর রহমানকে নিয়ে আলোচনায় বসেন।
আইএমএফের দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল গত বুধবার ঢাকায় আসেন। প্রথম দিন বৈঠকে বসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
১৫ দিনের এ সফর শেষ হবে আগামী ৯ নভেম্বর। এর মাঝে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আবারও কয়েক দফায় বসবে তারা। সফরের শেষ দিনেও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এর বাইরে সরকারের নীতি নির্ধারকসহ অংশীজনের সঙ্গেও বৈঠক করবে প্রতিনিধি দলটি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।