সমুদ্রপথে রপ্তানি করা রাশিয়ার তেলের মূল্য ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলারে বেঁধে দিয়েছে জি৭ জোট। রাশিয়ার তেল রপ্তানির আয় কমানোই এর উদ্দেশ্য। রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের ওপর ইইউয়ের নিষেধাজ্ঞা ৫ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে, তখন বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি ঠেকানোও এ পরিকল্পনার অংশ।
বেঁধে দেওয়া মূল্য বাজার মূল্যের চেয়ে কম রাখার দাবিতে পোল্যান্ড প্রস্তাবিত মূল্যের বিরোধিতা করেছিল। রাশিয়ার আয় কমিয়ে ইউক্রেইনের যুদ্ধে মস্কোর অর্থ ঢালার সামর্থ্যের লাগাম টেনে ধরতে প্রস্তাবিত বেঁধে দেওয়া মূল্য যতটা সম্ভব কম রাখার জন্য ইইউয়ের মধ্যস্থতাকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল দেশটি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ইইউয়ে নিযুকত্ পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছেন, বাজার মূল্যের চেয়ে ‘বেঁধে দেওয়া মূল্য’ অন্ততপক্ষে ৫ শতাংশ কম রাখার একটি প্রক্রিয়া অন্তর্ভূক্ত থাকায় পোল্যান্ড ইইউয়ের চুক্তিটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
জি৭ এর এই চুক্তি ইইউয়ের বাইরের দেশগুলোর সমুদ্রপথে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি অনুমোদন করবে, কিন্তু ওই তেল বেঁধে দেওয়া মূল্যের কমে কেনা না হলে শিপিং, ইন্সুরেন্স ও রি-ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো বিশ্বব্যাপী রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল পরিবহন করতে পারবে না; কারণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিপিং ও ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলোর সবারই ঠিকানা জি৭ দেশগুলোতে, তাই চুক্তিতে বেঁধে দেওয়া মূল্যের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করা মস্কোর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, এই চুক্তি নজিরবিহীন এবং রাশিয়ার যুদ্ধের বিরোধিতার ক্ষেত্রে জোটের সংকল্পকেই তুলে ধরেছে।
ইইউয়ের বর্তমান সভাপতি দেশ চেক রিপাবলিকের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, পোল্যান্ডের অনুমোদনের পর তারা চুক্তিটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সবুজ সংকেত দিতে ইইয়ের ২৭ দেশের সবার জন্য একটি লিখিত প্রক্রিয়া চালু করেছে।
এই চুক্তির বিস্তারিত রোববার ইইউয়ের আইনি জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ইইউয়ের নথিতে বলা হয়েছে, ৫ ডিসেম্বরের আগে লোড করা রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজগুলো চূড়ান্ত গন্তব্যে গিয়ে মাল খালাস করার জন্য ক্রান্তিকালীন সময় হিসেবে ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ পর্যন্ত ৪৫ দিনের ছাড় পাবে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লাইয়েন বলেছেন, মূল্য বেঁধে দেওয়ায় রাশিয়ার আয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেছেন, এই মূল্য বেঁধে দেওয়াতে জ্বালানি ও খাদ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে ভূগতে থাকা নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলো বিশেষভাবে উপকৃত হবে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “রাশিয়ার অর্থনীতির আকার ইতোমধ্যেই হ্রাস পেয়েছে এবং তাদের বাজেট ক্রমবর্ধমানভাবে পাতলা হয়ে আসছে, আর মূল্য বেঁধে দেওয়ার এই পদক্ষেপ অবিলম্বে (ভ্লাদিমির) পুতিনের আয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসকে জোরালো ধাক্কা দেবে।”
রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান গ্রেগরি ক্রাইসিন শুক্রবার বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাদের নিজেদের জ্বালানি নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে তুলছে।