পশ্চিমারা বেঁধে দিয়েছে তেলের দাম; যা মানবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। ফলে আগামী মাসগুলোতে তেলের যোগানে বিঘ্ন ঘটতে পারে আশঙ্কায় সোমবার থেকেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির সাত দেশের জোট জি৭, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অস্ট্রেলিয়া গত শুক্রবার সমুদ্র পথে রপ্তানি করা রাশিয়ার তেলের মূল্য ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) থেকে যা কার্যকর হয়েছে।
তেল রপ্তানি থেকে রাশিয়ার আয় কমানোই তাদের উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে তারা রাশিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বল করে ইউক্রেইন যুদ্ধে মস্কোর অর্থের যোগান কমাতে চাইছে।
ওদিকে, আলাদা একটি সিদ্ধান্তে তেল উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশ তাদের সক্ষমতার চেয়ে কম তেল উৎপাদন করবে বলে আগেই জানিয়েছে। তাদের ওই সিদ্ধান্তও বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
সোমবার বিশ্ববাজারে ‘ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল’র দাম প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৮৭ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলার হয়েছে।
ঠিক আগের দিন রোববার শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেকপ্লাস বলেছে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়াতে তারা উৎপাদন কমানোর যে কৌশল নিয়েছে সেটিতে অনড় থাকবে।
২৩টি তেল উৎপাদনকারী দেশের সংগঠন ওপেকপ্লাস। রাশিয়াও যার অন্তর্ভুক্ত। তারা নিয়মিত নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয় কতটুকু অপরিশোধিত তেল (ক্রুড অয়েল) তারা বিশ্ববাজারে ছাড়বে।
সোমবার থেকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম আবার বাড়তে শুরু করলেও তা এখনও ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু পর দাম যতটা লাফিয়ে উঠেছিল তার থেকে বেশ খানিকটা কমই আছে।
ওই সময় তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১২০ মার্কিন ডলারের উপরে উঠেছিল।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পুরো বিশ্বে তার প্রভাব পড়েছে। সব দেশে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।
তেলের মূল্য নির্ধারণী চুক্তি কার্যকর হওয়ায় ইইউর বাইরের দেশগুলো এখন সমুদ্রপথে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানির সুযোগ পাবে। কিন্তু তাদের ওই তেল বেঁধে দেওয়া মূল্যে বা তার কমে কিনতে হবে।
নতুবা শিপিং, ইন্সুরেন্স ও রি-ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো বিশ্বব্যাপী রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল পরিবহন করতে পারবে না; কারণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিপিং ও ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলোর সবারই ঠিকানা জি৭ দেশগুলোতে, তাই চুক্তিতে বেঁধে দেওয়া মূল্যের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করা মস্কোর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া অবশ্য বলে দিয়েছে, তারা পশ্চিমাদের বেঁধে দেওয়া দাম মানবে না এবং যেসব দেশ ওই দাম অনুসরণ করতে চায় তাদের রাশিয়া তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেবে।
‘এর ফলেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে’, বিবিসি-কে বলেছেন নরওয়ের একটি এনার্জি কোম্পানির সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট জর্জ লেঅন।
সোমবার তিনি বিবিসি-কে আরো বলেন, ‘‘রাশিয়া খুব স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছে যেসব দেশ প্রাইস ক্যাপ চুক্তিতে সই করবে তাদের কাছে তারা ক্রুড বিক্রি করবে না।
‘‘তাই সম্ভবত যেটা ঘটতে চলেছে সেটা হল, আগামী কয়েক মাস তেলের বাজারে আমরা বিশৃঙ্খলা দেখতে চলেছি এবং সেখানে সম্ভবত আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তেলের দাম আবার বাড়তে শুরু করবে।”
ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে তেলের দামের রেকর্ড মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিশ্ব অর্থনীতির গতি হ্রাস পায়। দেশগুলো তেলের ব্যবহার কমাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। যার ফলে তেলের দাম কমে আসে।
কিন্তু এখন ওপেকপ্লাসের সিদ্ধান্ত এবং রাশিয়ার তেলর দাম বেঁধে দেয়ার কারণে তা আবার বাড়তে শুরু করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
চীনে কোভিড বিধিনিষেধ শীথিল হতে শুরু করায় দেশটিতে তেলের চাহিদা বেড়ে যাবে এবং এটাও বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন কয়েকজন বিশেষজ্ঞ।