রাজস্থানের উদয়পুরে জঙ্গলের মাঝে এক পুরুষের গলাকাটা লাশ এবং ছুরি মেরে হত্যা করা এক নারীর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনা গত সপ্তাহে ভারতকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল।
জঙ্গলের মাঝে যৌনক্রিয়া করার সময় ওই যুগলকে হত্যা করা হয়েছিল; মারার আগে কেউ তাদের খালি গায়ে সুপারগ্লু লাগিয়ে দিয়েছিল বলেও পরে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে।
এ ঘটনায় সোমবার ৫২ বছর বয়সী এক তান্ত্রিককে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এখন এ জোড়াখুনের রহস্য উদ্ঘাটনের কৃতিত্ব দাবি করছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত সপ্তাহে গোগুন্ডা থানাধীন কেলা বাউডি জঙ্গল এলাকায় সরকারি স্কুলের ৩২ বছর বয়সী শিক্ষক রাহুল মিনা ও ৩১ বছর বয়সী সোনু কানওয়ারের লাশ মেলে।
বাধভি গুদা মন্দিরে দেখা হওয়ার পর এই দুই নারী-পুরুষ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে জানান পুলিশর দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ভুপেন্দর সিং ও কুন্দন কুয়ারিয়া।
ওই মন্দিরেই থাকতেন প্রভাবশালী তান্ত্রিক বালেশ জোশি। অঞ্চলটির স্থানীয় রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে তার ব্যাপক প্রভাব ব্যাপক।
সাধারণত, বিপদে পড়া লোকজনই এ তান্ত্রিকের দ্বারস্থ হতেন। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কই সম্ভবত রাহুলের সংসারে অশান্তি ডেকে এনেছিল, যে কারণে তার স্ত্রী তান্ত্রিকের শরণাপন্ন হন। বালেশ তখন রাহুলের স্ত্রীকে তার স্বামীর সঙ্গে সোনুর সম্পর্কের কথা বলে দেন, বলেন পুলিশ কর্মকর্তা বিকাশ কুমার।
রাহুল-সোনু বিষয়টি জানতে পেরে তান্ত্রিককে ভয় দেখানো শুরু করে; মানহানি করতে তারা বালেশের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনবে, এমন হুমকিও দেয়।
লোকের কাছে অপমানিত হওয়ার আশঙ্কায় তান্ত্রিক এ যুগলকে হত্যার ছক কষেন। তিনি ১৫ রুপি দামের ৫০টি দ্রুত শুকায় এমন সুপারগ্লুর টিউব কিনে একটি বোতলের মধ্যে সব আঠা ঢোকান।
এরপর গত ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাহুল-সোনুকে ডাকেন এবং জঙ্গলের একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যান। ‘সব সমস্যার সমাধান পেতে’ সেখানে ওই যুগলকে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হতেও প্ররোচিত করেন তিনি, বলছে পুলিশ।
তান্ত্রিক এরপর চলে যাওয়ার ভান করেন, কিন্তু রাহুল ও সোনু যৌনক্রিয়া শুরু করলে তিনি এসে তাদের শরীরে সুপারগ্লু ঢেলে দেন। এরপর তিনি রাহুলের গলা কাটেন এবং সোনুকে ছুরি মেরে হত্যা করেন।
পুলিশ পরে জঙ্গলের রাস্তা থেকে ৩০০ মিটার দূরে পড়ে থাকা ওই দুই নরনারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে।
মৃত্যুর আগে তারা দুইজনই সুপারগ্লুর আঠা থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে শরীরের নানা জায়গায় আঘাত পান; রাহুলের যৌনাঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছিল এবং তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলারও চেষ্টা হয়েছিল বলে ধারণা পুলিশের।
তান্ত্রিকের আঙ্গুলে সুপারগ্লুর অবশেষ পেয়ে তাকে ধরে পুলিশ। তার আগে প্রায় দুইশ মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ৫০টির মতো সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখে তারা।
জিজ্ঞাসাবাদে বালেশ রাহুল-সোনু যুগলকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। এই তান্ত্রিককে আটকের পর প্রভাবশালী অনেকেই তাকে ছাড়ানোর তদবির করে, কিন্তু নির্মম এই ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার কথা জানতে পেরে তারা পিছু হটেছে, বলেছে পুলিশ।