রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শুরু হবে শনিবার দুপুরে। তার দুদিন আগেই সেখানে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় রাজশাহী বিভাগীয় রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ বিভাগের আট জেলায় এ ধর্মঘটের ঘোষণা দেন।
ধর্মঘটের কারণে বৃহস্পতিবার রাজশাহী থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি এবং বাইরের কোনো বাসও প্রবেশ করেনি। সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে ঢাকাগামী বাসও।
রাজশাহী মহানগরের শিরোইল, ভদ্রা ও রেলগেট বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, বাস না পেয়ে অনেকে বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে ছুটছেন; অনেকে আবার ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ ট্রেন ধরতে রেলস্টেশনে ভিড় করেছেন।
বাস বন্ধ থাকায় আন্তঃজেলা রুটের যাত্রীরা বাধ্য হয়ে সিনএজি চালিত অটোরিকশা, হিউম্যান হলার ও মাইক্রোবাসসহ ছোট ছোট গাড়ি ভাড়া করছেন। কিন্তু ধর্মঘটের সুযোগে এসব যানবাহনে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
শুক্রবার ঢাকায় সরকারি চাকরির পরীক্ষা আছে তাই বৃহস্পতিবার আগেভাগেই রাজশাহী থেকে বেরিয়ে পড়েছেন আব্দুল মমিন। কিন্তু শিরোইল বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বাস বন্ধের খবরে চিন্তায় পড়ে যান তিনি।
আব্দুল মমিন বলেন, “চারদিন আগে থেকেই ট্রেনের টিকেট পাওয়া যাচ্ছেনা। এখন বাসও বন্ধ। এখন তো বিকল্প উপায়ও দেখছি না।”
শিরোইল বাসস্ট্যান্ড থেকে বের হতেই শিশির আলীকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। নওগাঁ থেকে এসেছিলেন, এখন ফেরার জন্য গাড়ির খোঁজ করছেন বলে জানালেন।
তিনি বলেন, “নওগাঁ থেকে রাজশাহী আসতে সময় লেগেছে পাঁচ ঘণ্টা; খরচ হয়েছে ৫০০ টাকা। যেখানে স্বাভাবিক দিন লাগে ২০০ টাকা। এখন ঢাকা যেতে কত টাকা লাগবে বুঝতেছি না।”
এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে রাজশাহী থেকে বিভিন্ন রুটের ট্রেনের টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। টিকেট না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়েই রওয়ানা দিচ্ছেন। এছাড়া রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে যেসব ট্রেন আসছে-যাচ্ছে, তাতে ‘অতিরিক্ত যাত্রী’ চাপ দেখা গেছে।
রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মাতিউল হক টিটু বলেন, “আমাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে।”
পরিবহন মালিক সমিতির ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ১. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন করতে হবে। ২. হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়ক বা আঞ্চলিক মহাসড়কে থ্রি-হুইলার (নছিমন, করিমন, ভটভটি, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ইত্যাদি) চলাচল বন্ধ করতে হবে। ৩. জ্বালানি তেল ও যন্ত্রাংশের মূল্য হ্রাস করতে হবে। ৪. কোভিডকালে গাড়ি চলাচল না করায় সে সময়ে ট্যাক্স মওকুফ করতে হবে। ৫. সব ধরনের সরকারি পাওনাদির (ট্যাক্স-টোকেন, ফিটনেস) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ করতে হবে। ৬. চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স-সংক্রান্ত নানাবিধ জটিলতা নিরসন করতে হবে। ৭. পরিবহনের যাবতীয় কাগজ হালনাগাদ বা সঠিক থাকার পরও নানাবিধ পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ৮. উপজেলা পর্যায়ে বিআরটিসি চলাচল দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ৯. মহাসড়কে হাট-বাজার আয়োজন বা পরিচালনা করা যাবে না এবং চলমান হাটবাজার অতি দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে। ১০. যাত্রী ওঠানামার জন্য পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রত্যেক জেলায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ ও ট্রাক ওভারলোড বন্ধ করতে হবে।