রাঙামাটিতে বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিতে ভালোবাসার ফুল


এফই অনলাইন ডেস্ক   | Published: December 16, 2022 17:38:41 | Updated: December 17, 2022 12:15:38


রাঙামাটিতে বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিতে ভালোবাসার ফুল

মহান বিজয় দিবসে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে কাপ্তাই হ্রদের বুকে একটি ছোট্ট টিলায় শায়িত বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়ক মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধিতে।

শুক্রবার সকালে নানিয়ারচবে বুড়িঘাটে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাঙামাটি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. তরিকুল ইসলাম। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিজিবি রাঙামাটি সেক্টরের সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কর্নেল মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের একজন মুন্সী আব্দুর রউফ শুয়ে আছেন নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাটের ছোট্ট এই টিলায়। দেশকে শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করতে ২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরু হলে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক কোম্পানি সৈন্যের সঙ্গে ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফও ছুটে আসেন পার্বত্য চট্টগ্রামে। এই বুড়িঘাটের চৌকিতে ন্যস্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।

“মুন্সি আব্দুর রউফের অসীম সাহস ও বীরত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ফলে শত্রুবাহিনী মহালছড়িতে মুক্তিবাহিনীর মূল অবস্থানের দিকে অগ্রসর হতে পারেনি। তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করে কর্তব্যপরায়ণতা ও দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।”

তিনি আরও বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের বীরত্বগাঁথা তরুণ প্রজন্মসহ সবার মাঝে তুলে ধরতে হবে। পর্যটকগণ এখানে ভ্রমণে আসলে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। পাশাপাশি রাঙামাটির প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্যও উপভোগ করতে পারবে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ ছিলেন চট্টগ্রামে। তিনি ছিলেন ১১ উইং-এ মাঝারি মেশিনগান ডিপার্টমেন্টের মেশিনগানার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি-মহালছড়ি জলপথে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

৮ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনীর দুই কোম্পানি সৈন্য মর্টার, মেশিনগান ও রাইফেল নিয়ে বুড়িঘাটের মুক্তিবাহিনীর নতুন প্রতিরক্ষা ঘাঁটিকে বিধ্বস্ত করতে সাতটি স্পিডবোট এবং দুইটি লঞ্চ নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে।

তখন ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ সহযোদ্ধাদের পিছু হটার সুযোগ করে দিতে নিজে পরিখায় দাঁড়িয়ে অনবরত গুলি করতে থাকেন পাকিস্তানি স্পিডবোটগুলোকে লক্ষ্য করে। পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে কৌশলে একা লড়ছিলেন তিনি। তিনি তাদের সাতটি স্পিডবোট একে একে ডুবিয়ে দিলে তারা তাদের দুটি লঞ্চ নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। হঠাৎ পাকবাহিনীর একটি মর্টারের গোলা তার পরিখায় এসে পড়ে এবং তিনি শহীদ হন।

সেদিন আব্দুর রউফের আত্মত্যাগে তার কোম্পানির প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার জীবন রক্ষা পায়। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্ব ও আত্মদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করে।

জানা যায়, দীর্ঘদিন অন্তরালেই থাকা এই বীরের সমাধির হদিস মিলে ১৯৯৬ সালে। তখন থেকে বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসন তার সমাধিস্থলটি দেখভালে দায়িত্ব পালন করছে।

শুরুতেই ওই এলাকার দয়াল কৃঞ্চ চাকমা নামের একজন স্থানীয় ব্যক্তি, যিনি মুন্সী আব্দর রউফকে সমাধিস্থ করেছিলেন, তাকে সমাধি স্থলটি দেখাশুনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে তার পুত্র বিনয় কৃঞ্চ চাকমা সমাধিস্থলটি দেখাশুনা করেন।

রাঙামাটিতে এই বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্য নির্মাণের পাশাপাশি তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একাধিক সেতু, সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফাউন্ডেশন পরিচালিত হচ্ছে।

Share if you like