নতুন বছরের প্রথম দিন রবিবার দেশে পণ্য প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় আয়োজন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হচ্ছে; দ্বিতীয়বারের মত এ মেলা বসছে পূর্বাচলে।
মাসব্যাপী এ মেলায় পণ্য প্রদর্শনে ঢাকার নতুন এ উপশহরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার (বিবিসিএফইসি) এবং বাইরের প্রাঙ্গণে কোম্পানিগুলো স্টল ও প্যাভিলিয়ন সাজাতে শেষ মুহূর্তের কাজ করছে।
রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত হয়ে ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) উদ্বোধন করবেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
এবারের মেলা থেকে ২০০ কোটি টাকার বেশি `স্পট অর্ডারের’ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতবারের মেলা থেকেও সমপরিমাণ স্পট অর্ডার পাওয়া গিয়েছিল।
শনিবার মেলা প্রাঙ্গণ বিবিসিএফইসি এর মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে অনেক দেশের ব্যবসায়ীদের মেলা পরিদর্শনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিদেশি ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি বাড়ার আশা করছেন তারা। রপ্তানির উন্নয়নই প্রধান লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
বাণিজ্য মেলা থেকে উল্লেখযোগ্য অর্ডার না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অনেক বড় একটি টার্গেটে পৌঁছাতে গেলে প্রথমে একটু ঝামেলা হয়। তবে এই মেলা থেকে আমাদের প্রধান টার্গেট বিক্রি, উন্নয়ন এবং পণ্য প্রদর্শন।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ মেলা শেরে বাংলা নগরে অনুষ্ঠিত হয়। কোভিড মহামারীর কারণে ২০২১ সালে এক বছর হয়নি।
কোভিডের বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২২ সালে পূর্বাচলে প্রদর্শনীর স্থায়ী কাঠামোতে প্রথমবার মেলা আয়োজন করা হয়।
রপ্তানিতে বৈচিত্রের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর আশা এক বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করতে পারে এরকম যেন অন্তত ১০টি খাত তৈরির। এখন পাট, সিরামিকস, ইলেক্ট্রনিক্স, হালকা প্রকৌশল পণ্য এবং আইসিটি থেকে ভালো আয় আসছে বলে জানান তিনি।
আইসিটি থেকে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের আয় আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে খোলা থাকবে এক ঘণ্টা বেশি।
মেলায় প্রদর্শনী কেন্দ্রের দুটি হল ছাড়াও বাইরের প্রাঙ্গণে স্টল প্যাভিলিয়ন ও রেস্টুরেন্টসহ ৩৩১টি স্থাপনা রয়েছে।
এবার ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপালসহ ১২টি দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। এসব দেশের প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টলের সংখ্যা ১৭টি।
প্রদর্শনী কেন্দ্রের ভেতরে হল ‘এ‘তে ৮৪টি এবং হল ‘বি’তে ৯০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রদর্শনী হলের সামনে ও পেছনে প্যাভিলিয়ন ৫৭টি। পেছনের মাঠে রেস্টুরেন্ট ২৩টি। এছাড়া হলের সামনে ও পেছনে স্টল থাকছে ৬০টি।
নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বিবেচনায় মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রবেশ গেইট, পার্কিং এরিয়া এবং সংশ্লিষ্ট সকল এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। এবার বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীরাও দায়িত্ব পালন করবেন। নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে।
দর্শনার্থীদের জন্য তথ্যকেন্দ্র এবং ব্যাংকিং সেবা দিতে মেলায় থাকছে জনতা, ট্রাস্ট ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। পাশাপাশি একাধিক ব্যাংক বুথ স্থাপন করেছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে দুটি মা ও শিশু কেন্দ্র।
মেলার দোতলা গাড়ি রাখার জায়গা ছাড়াও হলের বাইরে বড় জায়গাজুড়ে প্রায় এক হাজার গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি ও কয়েকটি পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস চলবে।
এবার প্রবেশ টিকেটের মূল্য ৪০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ২০ টাকা। অনলাইনেও মেলার টিকেট পাওয়া যাবে। বিকাশের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ ছাড়ে টিকেট কেনা যাবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এসময় বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান উপস্থিত ছিলেন।