রকমারি ফুলের চা


সুস্মিতা রায় | Published: November 26, 2022 12:05:21 | Updated: November 26, 2022 18:56:13


ছবি: সার্ভিং জয়

চায়ের সাথে বাঙালির প্রেমটা কখনো ফুরানোর নয়। চা প্রেমীদের দিন শুরুই হয় ধোঁয়া ওঠা পেয়ালাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে। অলস দুপুর হোক বা ক্লান্ত বিকেল, চায়ের চুমুকে আসে নব উদ্যম। চনমনে ভাব সব বিষণ্নতা ভুলিয়ে দেয় যেন। যেকোনো আড্ডা চায়ের সাথে বেশ জমজমাট।

সাধারণত চা বলতে শুধু ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস থেকে আহরিত জ্বাল দেয়া পানীয়কে বোঝানো হয়। এছাড়া হালে ভেষজ যেমন তুলসি পাতার চা বেশ জনপ্রিয়। তবে এসবের বাইরেও রকমারি ফুলের চা হয়ে থাকে, যা স্বাদে শুধু অনন্য নয়, গুণেও অতুলনীয়। ফুলের এই ভেষজ চা গুলি এন্টিঅক্সিডেন্টের উৎস যা শরীরকে প্রদাহের সাথে যুদ্ধ করতে শক্তি দেয়। ফুলের চায়ের রং খুব আকর্ষণীয়। এই চা পানে মনে প্রশান্তি আনে অনেকখানি। 

অপরাজিতা চা

শৌখিন বাগানীর লতানো কোণের খুব সহজলভ্য একটি ফুল অপরাজিতা। ফুটন্ত পানিতে তিন চারটে অপরাজিতার ফুল ছেড়ে দিলেই পাওয়া যাবে নীল রঙের চমৎকার পানীয়। যদি এতে যোগ করা হয় সামান্য লেবুর রস তাহলে রঙ খানিকটা গাঢ় হয়ে বেগুনি হয়ে উঠবে আর স্বাদে যুক্ত হবে নতুনত্ব। যদি চাই মিষ্টি স্বাদ, তবে এতে যোগ করা যেতে পারে স্টেভিয়া পাতার গুঁড়ো। এই অপরাজিতা চা ডায়াবেটিক রোগীর জন্যে বেশ উপাদেয়। 

অপরাজিতার চায়ের সুন্দর নীলাভ রঙের জন্য দায়ী আন্থোসায়ানিন নামের একটি এন্টিঅক্সিডেন্ট, যেটি ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

জবা চা 

জবা মালভেসি গোত্রের একটি অতিপরিচিত ফুল। তাজা জবার পাপড়ি শুকিয়ে রেখে দেয়া হয়। শুকনো লাল জবায় সেদ্ধ পানিতে চা হয় লালচে রঙের। রঙে রক্তাভ কিন্তু এই জবা চা রক্তচাপ কম রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। লিভারে জমে থাকা ক্ষতিকারক চর্বি ভেঙে ফেলে। এতে আছে সন্তুষ্টিজনক মাত্রায় পলিফেনলিক কম্পাউন্ড , যেটি ক্যান্সার প্রতিরোধে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে।

গোলাপ চা

গোলাপ চা রঙে, রসে, রূপে অনন্যা। গোলাপের পাপড়ি ছাড়িয়ে ফুটিয়ে নিলেই হবে গোলাপ চা। এছাড়া পাপড়ি শুকিয়ে রেখেও দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যাবে। ত্বকের হাইড্রেশনের জন্যে গোলাপ চা বেশ কাজের। এতে থাকা গ্যালিক এসিড শরীরে একটা আরামদায়ক ভাব আনে এবং পীড়া থেকে মুক্তি দেয়।

জেসমিন চা

যদি চায়ের ধোঁয়ার সাথে চাই একটু মিষ্টি সুবাস তবে তো জেসমিন চায়ের তাতে জুড়ি মেলা ভার। নিজস্ব মধুভাবে এই চা বেশ মিষ্টি মধুর। চায়ে থাকা ক্যাফেইন এবং থিয়ানিন মস্তিষ্ককে সজাগ রাখে এবং স্মৃতিবর্ধক রূপে ক্রিয়াশীল। এই চা মুখের ব্যাকটেরিয়াদের দাঁতে প্লাগ তৈরি করতে দেয় না।

ছবি: হেলথলাইন 

দেশি ফুলের চা তো হলো, এইবারে একটু মনোযোগ দেয়া যাক ভিনদেশি ফুলের চায়ে।

ক্যামোমাইল চা

ভেষজ চায়ের ভেতর ক্যামোমাইল সবচাইতে জনপ্রিয় তার প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যাবার মতো মন ছোঁয়ানো মিষ্টির স্বাদের জন্য। এস্টেরাসি গোত্রের অন্তর্গত ফুলটি কিছুটা ডেইজির মতো দেখতে তবে খুব ছোট।

সোনালী রঙের ক্যামোমাইল চা ঘুমের পরিমাণকে ঠিক রাখে। রক্তে চিনির মান নিয়ন্ত্রণে রাখে। হজম প্রক্রিয়াকে ঠিক রাখা এই চায়ের সবচেয়ে উপকারী গুণ। ডায়রিয়া, পেটের আলসার ও বদহজমের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। এতে থাকা এপিজেনিন নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারপ্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে।

ল্যাভেন্ডার চা 

সুগন্ধির জন্যে ল্যাভেন্ডারের সুখ্যাতি ভারী, তাইতো প্রচুর ব্যবহার আ্যরোমা থেরাপিতে। ল্যাভেন্ডার চা মধুর সাথে ঠিক যেন জম্পেশ। একটু খানি পুদিনা সাথে মিলিয়ে নিয়ে এই চা প্রস্তুত করলে বেশ একটা সতেজতার ভাব নিয়ে আসে। এই চা অনেক প্রশান্তিদায়ক, তাই পান করলে ঘুম ভালো হয়। এটি ডিপ্রেশনের রোগীদের জন্য বেশ ফলদায়ক। ত্বকের ব্রণ বা ফুসকুড়ি খুব তাড়াতাড়ি সারিয়ে দেয়। তবে যাদের এলার্জির সমস্যা আছে, তাদের এই চা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। 

জাফরান চা 

ফুলের যতরকম চা হয় বলতে গেলে জাফরান বা কেশর তাতে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য। 

জাফরান চায়ের প্রস্তুতপ্রণালী একটু ভিন্নরকম। এক্ষেত্রে আগে একটি পাত্রে সামান্য পানিতে তিন চারটি কেশর কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। এইবার এই পাত্রে পানি দিয়ে  এলাচ, দারুচিনি চাইলে চিনি দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। শেষে কেশরের রং ছাড়া পানিটা ফুটন্ত পানিতে মেলালেই তৈরি হয়ে যাবে জাফরান চা। পরিবেশনের পেয়ালায় কিছু কাঠবাদাম কুচি নিলে একটি ভিন্ন রকম স্বাদ হবে। 

এই জাফরান চা কর্টিসলের মাত্রা কমায়। কর্টিসল যেকোনো স্ট্রেসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ওজন কমাতে চাইলে এই চা রোজ সকালে পান করে দেখা যেতে পারে।

দেশের যেকোনো হার্বাল চায়ের দোকানে প্রক্রিয়াজাতকৃত ফুলের চা বেশ সহজলভ্য। এছাড়া অনলাইন শপ গুলিতে বিদেশি নানা ব্রান্ডের ফুলের চা পাওয়া যায়। এই উপায়ে না পারলে ফুলগুলি সংগ্রহ করে শুকিয়ে নিলেই হবে।

আর কি! আসছে শীতেই বাহারি সব ফুলের চায়ে চুমুক পড়ুক তবে।

সুস্মিতা রায় বর্তমানে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজে ৪র্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন।

susmi9897@gmail.com

Share if you like