রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হবে।
সোমবার দুপুরের পর থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
এ নির্বাচনের ২২৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮৬টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর গোটা নির্বাচনজুড়ে ছয় স্তরের নিরাপত্তার পরিকল্পনা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
নির্বাচনের আগের দিন সোমবার রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনা বিফ্রিংয়ে বলেন, “রংপুর সিটিতে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন হবে মডেল নির্বাচন। এজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।”
“নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া মাঠে সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন।”
নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সবশেষ অবস্থা জানিয়ে নুরে আলম মিনা বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্যকে নিরপেক্ষভাবে সার্ভিস রুল মেনে দায়িত্ব পালন করার কথা বলা হয়েছে। কেউ এর ব্যতিক্রম ঘটালে তার দায়ভার প্রতিষ্ঠান নেবে না।
“নির্বাচনে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি মোবাইল ফোর্স থাকবে। এ ছাড়া প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং প্রতি থানায় একটি করে রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। আর প্রতি দুটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে র্যাবের টিম থাকবে।”
স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র্যাব-পুলিশের টিম সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, “আর গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে চারজন অস্ত্রসহ পুলিশ (একজন এসআই বা এএসআই ও তিনজন কনস্টেবল), দুইজন অস্ত্রসহ আনসার ও ১০ জন লাঠিসহ আনসার/ভিডিপি সদস্য (চারজন মহিলা ও ছয়জন পুরুষ) মোতায়েন থাকবে।
এ ছাড়া ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১৬ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানান নূরে আলম মিনা।
২০১২ সালের ২৮ জুন ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠনের পর ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেবার এক লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট এবং বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫ ভোট।
২০১২ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলো তিন লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৯ হাজার ১২৮ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭৮ হাজার ৬১৪ জন।
দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এক লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু পেয়েছিলেন ৬২ হাজার ৪০০ ভোট এবং বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট।
ওই বছর ভোটার সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ ও নারী এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন।
তৃতীয় দফায় মঙ্গলবার মহানগরের ২২৯টি কেন্দ্রের এক হাজার ৩৪৯টি কক্ষে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটার চার লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৬ জন, পুরুষ দুই লাখ ১২ হাজার ৩০৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার একজন।
এবার মেয়র পদে নয় জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৮৩ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৮ জনসহ সর্বমোট ২৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে একজন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ২২৯ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং এক হাজার ৩৪৯ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া দুই হাজার ৬৯৮ জন পোলিং অফিসার থাকবেন।