Loading...
The Financial Express

যোগাসনেই আরাম হোক গ্যাস্ট্রিক

| Updated: November 21, 2022 21:18:50


যোগাসনেই আরাম হোক গ্যাস্ট্রিক

ভূড়িভোজন রসনায় তৃপ্তি দিলেও বাধ সাধে পেট। মহাভোজের কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় অম্বল, ঢেঁকুর, বুক জ্বালাপোড়া। কেউ ছোটেন ডাক্তারের কাছে, কেউ বা নিজেই অ্যান্টাসিড, ওমিপ্রাজল খাওয়া শুরু করেন। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ গ্যাস্ট্রিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। কিছুক্ষণের জন্য আরাম দিলেও সেগুলো স্থায়ীভাবে পেটের ও হজমক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করে।

নির্দিষ্ট কয়েকটি যোগাসন অভ্যাসের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিক সমস্যার তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধান লাভ করা সম্ভব।


পবন মুক্তাসন

এ আসন অভ্যাস করলে গ্যাস্ট্রিক, বুক জ্বালাপোড়া, টক ঢেঁকুর সমস্যা থেকে তাৎক্ষণিক আরাম পাওয়া যায়। ঘাড়, পিঠ ও পেটের পেশি সুদৃঢ় হয়। হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। পেটে এবং অন্ত্রে জমা হওয়া বায়ু নিষ্কাশিত হয়। নিয়মিত এটি অনুশীলন করলে দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

প্রথমে মেঝে বা বিছানায় দুই পা টান করে সোজা হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। ডান পায়ের হাঁটু থেকে ভেঙ্গে পা বুকের কাছে নিয়ে আসতে হবে। দুই হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁসিয়ে ইন্টারলকিং করে হাঁটুর ওপর রেখে ধীরেধীরে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে নাক নিয়ে হাঁটুতে ঠেকাতে হবে। এভাবে কিছুক্ষণ থাকতে হবেসামর্থ্য অনুযায়ী ১০-৩০ সেকেন্ড থাকলেই হবে। তারপর ধীরেধীরে হাত ছেড়ে দিয়ে আগের অবস্থায় ফিরে আসতে হবে। ডান হাঁটুর পরে বাম হাঁটু এবং শেষে দুই হাঁটু একসাথে নিয়ে চেষ্টা করতে হবে। এভাবে একটি সাইকেল বা চক্র সম্পন্ন হয়। নিয়মিত ৩-৪ টি সাইকেল প্র‍্যাকটিস করতে হবে।

শুয়ে করতে না পারলে বসেও সিটেড পবন মুক্তাসন করা যায়। যাদের কোমড়ে বা পিঠে ব্যথা আছে তাদের এ আসন অভ্যাসের আগে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।


ধনুরাসন

নিয়মিত ধনুরাসন অনুশীলন করলে বৃক্ক এবং পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অম্বল দূর হয়। শরীর থেকে টক্সিক পদার্থ বের হয়ে যায়। হজমশক্তির উন্নতি ঘটে এবং দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর হয়।

নাম শুনেই বোঝা যায় এই আসনে শরীর অনেকটা ধনুকের আকারে স্থিত হয়। প্রথমে দুই পায়ের মাঝখানে ফাঁকা রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। হাঁটু থেকে দুই পা মুড়ে পায়ের গোড়ালি নিতম্বের উপর নিয়ে আসতে হবে। দুই হাত দিয়ে পায়ের গোড়ালির উপরের দিকটা ধরে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে শ্বাস নিতে নিতে হাত সোজা রেখে হাঁটু ও ঊরু দুটোকে উপরের দিকে তুলতে হবে। নাভি ও পেটের দিকের অংশ ছাড়া শরীরের বাকি অংশ উপরের দিকে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ১০-৩০ সেকেন্ড থাকার চেষ্টা করতে হবে। ৩-৪ টি চক্র সম্পন্ন করতে হবে নিয়মিত।

ধনুরাসন গ্যাস্ট্রিকের তাৎক্ষণিক আরাম দেয় না। মেয়েদের মাসিক চলা অবস্থায় এ আসন করা নিষেধ।


বজ্রাসন ও মূণ্ডকাসন

বজ্রাসন ও মূণ্ডকাসনের বসার ভঙ্গি এবং উপকারিতা প্রায় কাছাকাছি। শরীরের উপরের দিকে রক্তচলাচল বৃদ্ধি করায় পাচনতন্ত্র শক্তিশালী হয়। অম্বল ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। অগ্নাশয়কে সক্রিয় করে বিধায় ডায়াবেটিস সমস্যার উন্নতি ঘটে।

বজ্রাসন ভরা পেটে করতে হয়। কয়েকবার শ্বাস নিয়ে রিল্যাক্সড হয়ে মাদুর বা বিছানায় হাঁটু গেড়ে বসে পড়তে হবে। ভর পায়ের গোড়ালির উপর দিন এবং পায়ের আঙ্গুলগুলো বাইরের দিকে রাখতে হবে। গোড়ালির মধ্যে ফাঁকা রাখা যাবে না। হাতের তালু হাঁটুর উপর রেখে মেরুদণ্ড সোজা করে এই ভঙ্গিতে ১০-৩০ সেকেন্ড বসে থাকার অভ্যাস করতে হবে।

মূণ্ডকাসনের জন্য প্রথমে বজ্রাসনে বসতে হবে। দুই হাতের পাতা এক করে নাভির উপরে রাখতে হবে। শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ধীরেধীরে সামনের দিকে ঝুঁকতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে সাধ্য অনুযায়ী ১০-৩০ সেকেন্ড ঝুঁকে থাকার চেষ্টা করতে হবে। এভাবে নিয়মিত ৩-৪ টি চক্র অনুশীলন করা যায়।

হঠাৎ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে এবং মেয়েদের মাসিক চলা অবস্থায় এ আসনগুলো করা উচিত নয়। যোগাসন অভ্যাসের আরেকটি নিয়ম হল যতক্ষণ আসন ততক্ষণ বিশ্রাম। এক আসন শেষ হলে শবাসনে যতক্ষণ আসন করেছেন ততক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে পরের আসন শুরু করা উচিত।


মেহেদি হাসান বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত।

[email protected]

Share if you like

Filter By Topic