আর্কটিক অঞ্চল থেকে ধেয়ে আসা তীব্র শীতকালীন ঝড়ে নাকাল যুক্তরাষ্ট্রে শনিবারও ৭ লাখের বেশি মানুষ বিদ্যুৎহীন ছিল বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তাপমাত্রাজনিত গাড়ি দুর্ঘটনা এরই মধ্যে অন্তত ১৬ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, দেশটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার ফ্লাইটও বাতিল হচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
হু হু করে নামতে থাকা তাপমাত্রায় ঘর উষ্ণ রাখার চাহিদা বাড়ছে; এর সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের ক্ষতি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই বিদ্যুৎব্যবস্থার ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার সকালের দিকেও দেশটির ১৮ লাখ ঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎহীন ছিল, পরে ধারাবাহিকভাবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে।
দেশটির অনেক বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানিই ভোক্তাদেরকে বড়সড় গৃহস্থালি যন্ত্র না চালিয়ে এবং দরকার হচ্ছে না এমন বাতি বন্ধ করে বিদ্যুৎ সঞ্চয়ে অনুরোধ জানিয়েছে।
শনিবার বিকালে ডিউক এনার্জি জানায়, তারা নর্থ ও সাউথ ক্যারোলাইনাজুড়ে একেক জায়গায় একেক সময়ে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শনিবার সকাল থেকে যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ায় এখন তা আর করা লাগছে না।
ঝড়ের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বছরের সবচেয়ে ব্যস্ততম সময় বড়দিনের প্রাক্কালে লাখ লাখ মার্কিনির ছুটি কাটানোর পরিকল্পনাও মাঠে মারা যেতে বসেছে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং করা ফ্লাইটঅ্যাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, শনিবারও দেশটির বিমানবন্দরগুলোতে দুই হাজার ৭০০র বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে; নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে ছেড়েছে ৬ হাজার চারশর বেশি ফ্লাইট।
শুক্রবার বাতিল হওয়া ফ্লাইটের সংখ্যা ছিল ৫ হাজারের বেশি।
আমেরিকান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের অনুমান, ২৩ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারির মধ্যে ১১ কোটি ২৭ লাখ মার্কিনির বাড়ি থেকে ৮০ কিলোমিটার বা আরও দূরে কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রবল ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে তাদের অনেককেই এখন ছুটি বাড়িতেই কাটাতে হচ্ছে।
আবহাওয়াজনিত গাড়ি দুর্ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে; বরফ ও তুষারের কারণে অনেক সড়কে শত শত লোক আটকাও পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
পেনসিলভানিয়ার পিটসবুর্গের তাপমাত্রা শনিবার ১৯৮৩ সালের রেকর্ড ভেঙে মাইনাস ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনএসডব্লিউ)।
জর্জিয়ার এথেন্স ও সাউথ ক্যারোলাইনার শার্লসটোন এবং ওয়াশিংটন ডিসিও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার আলাদা আলাদা রেকর্ড গড়তে পারে, পূর্বাভাসে বলেছে তারা।
“বড়দিনজুড়েই ঠাণ্ডার ঝাপটা অব্যাহত থাকবে,” বলেছেন আবহাওয়াবিদ রবিনসন কুক।
এনএসডব্লিউর হিসাবে শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মিনেপোলিসে, মাইনাস ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (মাইনাস ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস); আর বড়দিনের সকালে দেশটির সবচেয়ে শীতল জায়গা হবে নর্থ ডাকোটার ফারগো, তাপমাত্রা থাকবে মাইনাস ২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ও মধ্যপশ্চিমের এলাকাগুলো মঙ্গলবারের মধ্যে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরতে পারে, তবে পূর্ব উপকূলের রাজ্যগুলোকে এজন্য বৃহস্পতি-শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগবে বলে জানিয়েছেন কুক।
তীব্র ঠাণ্ডায় কর্তৃপক্ষ লাইব্রেরি ও থানায় উষ্ণতা কেন্দ্র খুলে গৃহহীনদের জন্য অস্থায়ী আবাসের ব্যবস্থা করেছে; সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটির দক্ষিণের সীমান্তে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যে ঢল নেমেছে, ভয়াবহ এ শীতকালীন ঝড় তাদের জন্য ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ নিয়েও হাজির হয়েছে।