গত বছর বাজারে মূলধনের আকার এক লাখ কোটি ডলার ছাড়ালেও এক বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ২০ কোম্পানির তালিকা থেকে বাদ পড়েছে মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেড।
সিএনবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কেবল ২০২২ সালেই ৭০ শতাংশ বাজারমূল্য হারিয়েছে এ সোশাল মিডিয়া জায়ান্ট। শেয়ার বাজারে মেটার মূলধন নেমে এসেছে ২৭ হাজার কোটি ডলারের নিচে।
বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর কেবল বৃহস্পতিবারই শেয়ার বাজারে মেটার শেয়ার দর পড়েছে ২৩ শতাংশ।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ১ লাখ কোটি ডলার বাজার মূলধনের মাইলফলক ছোঁয়ার পর অ্যাপল, মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট ও অ্যামাজনের মত কোম্পানির কাতারে দাঁড়িয়েছিল মেটা।
কিন্তু এরপর এক বছরে শেয়ার বাজারে ৭৩ হাজার কোটি ডলার কমে গেছে মেটার বাজার মূলধন। মার্ক জাকারবার্গের কোম্পানি বাজারমূল্য এখন ফাইজার ও কোকাকোলার কাতারে নেমে এসেছে।
সিএনবিসি লিখেছে, গত বছরের শেষ দিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কা দেখা দেওয়ার পরপরই মেটার শেয়ারের দরপতন শুরু হয়েছিল। সেই পতনের গতি আরও বেড়েছে ২০২২ সালের শুরুতে।
অ্যাপল নিজস্ব আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের জন্য গোপনতা নীতিমালায় বড় পরিবর্তন আনায় ধাক্কা লেগেছে মেটার বিজ্ঞাপনী ব্যবসায়। চলতি বছরের শুরুতেই অ্যাপলের নীতিমালা পরিবর্তনের জেরে আয় এক হাজার কোটি ডলার কমার খবর জানিয়েছিল মেটা।
সিএনবিসি বলছে, প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ নানাভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করলেও তাতে সম্ভবত হিতে বিপরীত হচ্ছে।
গত অক্টোবরে কোম্পানির নাম পাল্টে ‘মেটা’ করার পর থেকেই জাকারবার্গ ‘মেটাভার্স’-কে কোম্পানির ভবিষ্যৎ হিসেবে উপস্থাপন করে প্রচার চালাচ্ছেন। পেশাদারী কাজ, খেলাধুলা এমনকি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ভার্চুয়াল জগৎটিকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন তিনি।
কিন্তু বিনিয়োগকারীরা মেটাভার্স খাতে জাকারবার্গের হাত খুলে বিনিয়োগের প্রবণতাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন না বলে উঠে এসেছে সিএনবিসির প্রতিবেদনে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
অন্যদিকে বিজ্ঞাপন ব্যবসা থেকেও কোম্পানির আয় কমছে। বছরের শেষ প্রান্তিকেও আয় কমার আভাস দিয়েছে মেটা।
সিএনবিসি লিখেছে, বুধবার কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় জাকারবার্গকে মনে হয়েছে কিছুটা ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’।
পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে জাকারবার্গ বলেন, “ব্যবসা এবং পুরো দুনিয়াতেই এখন অনেক কিছু ঘটছে। সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে জটিলতা আছে, এখন প্রতিযোগিতাও অনেক। বিজ্ঞাপন খাতে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে, বিশেষ করে অ্যাপলের কাছ থেকে।”
“এ ছাড়াও আমরা দীর্ঘমেয়াদী কিছু খাতে খরচ করছি, আমাদের বিশ্বাস, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি কিছু ফেরত দেবে এই বিনিয়োগ।”
ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে যাওয়া অন্য চার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এখনও বাজারে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে।
সিএনবিসি বলছে, অন্যান্য কোম্পানির মত আয় কমলেও যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে অ্যাপল, মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট ও অ্যামাজন।
অবস্থান হারিয়েছে কেবল জাকারবার্গের মেটা প্ল্যাটফর্মস। ইলন মাস্কের টেসলা এবং হার্ডওয়্যার নির্মাতা এনভিডিয়াও এখন বাজারমূল্যের হিসেবে মেটার চেয়ে এগিয়ে।