ভর সন্ধ্যায় ঢাকার আসাদগেইটের ভিড়ের রাস্তায় ছুরি হাতে একদল ছিনতাইকারীর বাসে হামলা করার ভয়ঙ্কর এক ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করেছেন এক বাসযাত্রী। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
আসাদগেইট ফুটব্রিজের নিচে ওই এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন চলতি পথের যাত্রীরা। আর পুলিশ বলছে সেই গতানুগতিক কথা– ছিনতাইকারীদের ধরতে তারা ‘কাজ করছেন’।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বোনকে হাসপাতালে রেখে ট্রান্স সিলভা পরিবহনের একটি বাসে করে মিরপুরের দিক থেকে ফিরছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী জর্দান আসিফ। বাসটি তখন আসাদগেইট ফুটব্রিজের নিচে যানজটে দাঁড়ানো।
বাসের এক যাত্রীর ফোন জানালা দিয়ে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হলে তিনি ছিনতাইকারী বলে চিৎকার দেন। সবার নজর তখন যায় সেদিকে।
যাত্রীরা তখন একসঙ্গে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। রাস্তার উল্টোদিকে থাকা পুলিশের একটি ভ্যান থেকে বাঁশিও বাজানো হয়। তাতে সেই ছিনতাইকারী সেখান থেকে সরে যায়।
কিন্তু এর পরপরই বড় ছুরি হাতে ৩-৪ জন ছিনতাইকারী বাসের দিকে তেড়ে গেলে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেই দৃশ্যের কিছুটা ভিডিও করে নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেছেন আসিফ।
সেই ভিডিওতে দেখা যায়, বাসের যাত্রীরা চিৎকার করে বাসের হেলপার ও কন্ডাক্টরকে দরজা আটকে দিতে বলছেন। বাসের জানালা দিয়ে ছোরা হাতে এক তরুণকেও দেখা যায় ওই ভিডিওতে।
বাসের যাত্রীদের একজনকে বলতে শোনা যায়, “কতো বড় চাকু হাতে দেখছেন! এতো দিনেদুপুরে বাসে ডাকাতি। মানুষের জান-মালের কোনো নিরাপত্তা নাই।”
আরেকজন বলেন, “পুলিশ দেখলো, একটা বাঁশি ফু দিল আর চইলা গেল। আর ওরা তো চাকু নিয়া ঘুরতাছে।”
এ সময় অন্য আরেকজন বলেন, “ওরা তো ভিআইপি প্রটোকলের পুলিশ…।”
যোগাযোগ করা হলে আসিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। বাস ভরা যাত্রী। বাসের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল কয়েকজন তরুণ বাস, অটোরিকশা আর প্রাইভেট কারের আশপাশ দিয়ে হাঁটাহাটি করছে। তাদেরই একজন হঠাৎ করে বাসের এক যাত্রীর ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
“যার ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল তিনি একজন আইনজীবী এবং নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন। ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার সময়ই ছিনতাইকারীর সঙ্গে তার চোখাচোখি হয়। তিনি তাদের ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। রাস্তার অপর পাশে (শ্যামলীমুখী রাস্তায়) একটা পুলিশের গাড়ি দেখে বাসের যাত্রীরা তখন চিৎকার করেন।”
আসিফ বলেন, পুলিশ লাঠি দেখিয়ে বাঁশি বাজালে ছিনতাইকারীরা সরে যায়। কিন্তু পুলিশের গাড়ি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিনতাইকারীরা দল বেঁধে ছোরা নিয়ে ওই ব্যক্তির ওপর হামলা চালাতে এলে বাসে আতঙ্ক ছড়ায়।
“প্রথমে আমি ভেবেছিলাম বুঝি ওই লোকের সঙ্গে ব্যক্তিগত শত্রুতা, তারপর জানলাম ওরা ছিনতাইকারী।”
আসিফ বলেন, “আমি বাইকে চলাফেরা করি। কিন্তু বোন অসুস্থ থাকায় সেদিন তাকে হাসপাতালে রেখে বাসে ফিরছিলাম। যারা বাসের নিয়মিত যাত্রী, তারা বলছিলেন এই জায়গায় এরকম তরুণরা প্রায়ই ঘোরাফেরা করে এবং সুযোগ পেলেই মোবাইল টান দিয়ে নিয়ে যায়। তবে এরা যে এভাবে ছুরি হাতে বাসভর্তি যাত্রীদের ওপর চড়াও হওয়ার সাহস দেখাতে পারে, তা কারও কল্পনাতেও আসেনি।”
ওই সময়টার বর্ণনা দিয়ে আসিফ বলেন, “বাসের ভেতর সবাই খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম আমরা। ওদের সবার হাতে ছিল ফোল্ডিং ছুরি। যাত্রীরা সবাই হেলপার-কন্ডাক্টরকে দরজা লাগিয়ে দিতে বলছিলেন। গরমের মধ্যেই সবাই জানালা লাগিয়ে দিয়েছিল।”
পুলিশ বলছে, মিরপুর সড়কের শ্যামলী অভিমুখী অংশটি মোহাম্মদপুর থানায় আর উল্টোপাশের রাস্তাটি পড়েছে শেরেবাংলা নগর থানায়। তবে দুই থানার পুলিশই অপরাধীদের শনাক্ত করতে কাজ করছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এইচএম আজিমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশের পক্ষ থেকে বাসের যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পুলিশ তাদের (ছিনতাইকারী) ধরতে কাজ করছে।”
এর আগে গত রোববার একই জায়গায় ছিনতাইয়ের শিকার হন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের একজন নারী সাংবাদিক। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাইড শেয়ারের মোটরসাইকেলে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে আসাদগেট পেট্রোল পাম্পের সামনে যানজটে দাঁড়ানো অবস্থায় তার ফোনে কল আসে। তিনি ফোন কানে নিলে ১৭-১৮ বছরের এক তরুণ ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দেয়। এ সময় ওই নারী সাংবাদিক মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে আঘাত পান।