মেট্রোরেল কথন: বিশ্বের সেরা ৫ মেট্রো ব্যবস্থা


ফাইয়াজ আহনাফ সামিন | Published: December 29, 2022 14:48:17 | Updated: December 29, 2022 20:48:03


মেট্রোরেল কথন: বিশ্বের সেরা ৫ মেট্রো ব্যবস্থা

২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়ে গেল বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল সার্ভিসের। ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সাধারণ যাত্রী চলাচল করতে পারবে এতে। পরবর্তীতে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হবে মেট্রোরেল। এখন উদ্বোধন হওয়া এমআরটি-৬ নামক মেট্রোরেলটির দৈর্ঘ্য মোট ২০.১০ কিলোমিটার। মোট ১৬টি স্টেশন রয়েছে এর আওতায়। এমআরটি-৬ এর পরে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আরো মেট্রোরেল চালু করা হবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মেট্রোরেল সার্ভিস আছে। এর ইতিহাস অনেক পুরোনো। লন্ডনে প্রথম মেট্রো ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম চালু হয় ১৮৬৩ সালে। এরপর বিশ্বের বড় বড় শহরে যাত্রীদের যাতায়াত সহজ করার জন্য মেট্রোরেল চালু করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। 

হংকং মেট্রোরেল

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও সময়ানুবর্তিতার দিক দিয়ে হংকং মেট্রোরেলকে ধরা হয় শ্রেষ্ঠ। তারা এতটাই সময়নিষ্ঠ সেবা দিতে বদ্ধপরিকর যে ট্রেন যদি ৩০ মিনিট দেরি করে তাহলে কর্তৃপক্ষকে ১ মিলিয়ন হংকং ডলার জরিমানা দিতে হয়। আর এই টাকা খরচ করা হয় যাত্রীদের স্বার্থে। তাই হংকং মেট্রো কখনোই দেরি করে না।

হংকং মেট্রোরেল,  ছবি: উইকিডাটা

এদের স্টেশন ও ট্রেনের ভেতর থাকে সবসময় নতুনের মতো পরিষ্কার। ১১টি লাইনের মেট্রোরেল ২১৯ কিলোমিটার জুড়ে আছে হংকং শহরে। ১৫৯টি স্টেশন আছে যাত্রী ওঠানামা করার জন্য। ৩০ বছর পুরানো মেট্রোরেল হওয়া সত্ত্বেও তাদের আছে সর্বাধুনিক সকল সুবিধা। প্রতিদিন প্রায় ৩৪ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করতে পারে হংকং মেট্রোতে। মেট্রোরেলে চলাচলের সময় যাত্রীদের কোনো অসুবিধা যেন না হয়, সেজন্য স্টেশনে নিবেদিত কর্মীরা কাজ করে থাকে। স্টেশনের ভেতরই আছে রেস্টুরেন্ট, এটিএম মেশিন ও ছোট ছোট শপিং মল।

টোকিও মেট্রোরেল 

১৯২৭ সালে চালু হয় টোকিও মেট্রো। হংকং এর মতো টোকিও মেট্রোও তাদের সময়ানুবর্তিতা ও পরিচ্ছন্নতার জন্য বিশ্ববিখ্যাত। ৯টি রেল লাইন মোট ১৯৫ কিলোমিটার জুড়ে আছে টোকিও শহরে। যাত্রীদের জন্য আছে ১৮০টি স্টেশন। প্রতিদিন প্রায় ৭০ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করে থাকে টোকিও মেট্রোতে।

টোকিও মেট্রোরেল,  ছবি: উইকিপিডিয়া

যাত্রীদের বোঝার সুবিধার্থে মেট্রোর ৯টি লাইনের রঙ ৯ রকম করা আছে টোকিও মেট্রোতে। একেকটি লাইন একেকটি অঞ্চলের রেল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। টোকিও মেট্রোকে বলা হয় যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ মেট্রোরেল। সব স্টেশনে একটি ইমার্জেন্সি বাটন থাকে। যেটি যাত্রীরা চাপ দিলে ওই স্টেশনের সব ট্রেন একসাথে থেমে যায়। স্টেশনে যাত্রীদের জন্য ওয়াইফাই সুবিধাসহ বেশ কিছু সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আছে টোকিও মেট্রোতে।

সিউল মেট্রোরেল 

১৯৭৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার চালু হয় সিউল মেট্রোরেল। এটি বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ মেট্রোরেলের একটি। মোট ২৩টি রেল লাইন আছে সিউল মেট্রোর। ১২৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ সিউল মেট্রোর স্টেশন আছে ৭৬৮টি। প্রতিদিন প্রায় দশ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করে এই মেট্রোরেলে।

সিউল মেট্রোরেল, ছবি: পিক্সবে

দক্ষিণ কোরিয়া যে একটি সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর দেশ তা প্রমাণিত হয় তাদের মেট্রো দেখলেই। মেট্রোতে যাত্রীদের সুবিধার জন্য আছে টিভি ও ওয়াইফাই। শীতকালে যাত্রীদের সুবিধার্থে মেট্রোর প্রতিটি সিট হিটেড (গরম) থাকে। সিউল মেট্রো স্টেশনগুলোয় শপিং মল আছে। এছাড়াও সিউলের দর্শনীয় স্থানগুলোয় যাওয়ার জন্য নাগরিক ও বিদেশীদের জন্য সরাসরি যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

লন্ডন মেট্রোরেল

লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড নামে পরিচিত লন্ডন মেট্রোরেল হলো বিশ্বের প্রথম মেট্রোরেল সার্ভিস। ১৮৯০ সাল থেকে তারা বৈদ্যুতিক রেল পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে লন্ডন মেট্রোর দৈর্ঘ্য ৪০২ কিলোমিটার। ১১টি লাইন ও ২৭০টি স্টেশনে যাত্রীদের জন্য প্রতিদিন ৫৪০টির বেশি ট্রেন চলাচল করে। ৪০২ কিলোমিটারের মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার মাটির নিচে দিয়ে চলাচল করে লন্ডন মেট্রোর।

লন্ডন মেট্রোরেল, ছবি: ওয়্যারড ইউকে

সবচেয়ে পুরনো হওয়া সত্ত্বেও তারা বর্তমানের আধুনিক প্রযুক্তির মেট্রোগুলো থেকে পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন স্টেশনে চালু হয়েছে ওয়াইফাই সেবা ও কাগজের টিকিটবিহীন যাতায়াত ব্যবস্থা। মেট্রোর সেবা লন্ডন শহর ছাড়িয়ে বাকিংহামশায়ার, এসেক্স ও হার্টফোর্ডশায়ার পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।

মস্কো মেট্রোরেল

মস্কো মেট্রোরেল যতটা না তার সেবার জন্য জনপ্রিয়, তার চেয়েও বেশি জনপ্রিয় তাদের দৃষ্টিনন্দন স্টেশনের জন্য। মার্বেলের মেঝে, সোনালি কারুকাজ, অলঙ্কারে সমৃদ্ধ প্রবেশদ্বার সমূহ দেখলে যে কেউ মনে করতে পারে যে তারা মেট্রো স্টেশনে নয়, আর্ট মিউজিয়ামে প্রবেশ করেছে। অনেকের মতে সৌন্দর্যের দিক দিয়ে মেট্রোরেলকে বিচার করা হলে সবার আগে আসতো মস্কো মেট্রোর নাম।

মস্কো মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনের ছবি,  ছবি: ডেভিড বার্ডনি

১৯৩৫ সালে প্রথম চালু হয় মস্কো মেট্রো সিস্টেম। বর্তমানে এখানে ১৭টি লাইন আছে। মোট মেট্রো সার্ভিসের দৈর্ঘ্য ৪৬৭ কিলোমিটার। আর স্টেশন আছে ২৮৭টি। প্রতিদিন প্রায় ৭০ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করে মস্কো মেট্রোতে।

এছাড়াও নিউইয়র্ক, মাদ্রিদ, সাংহাই, গুয়াংজু, সিঙ্গাপুর, দিল্লিসহ বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় শহরে মেট্রোরেল সার্ভিস আছে যা প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের দৈনন্দিন শহুরে যাত্রা ও কর্মস্থলে গমনকে করছে ঝঞ্ঝাটমুক্ত।

ফাইয়াজ আহনাফ সামিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

faiyazahnaf678@gmail.com

Share if you like