এক যুগের ব্যবধানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ১০০ কোটি বেড়ে ৮০০ কোটির মাইলফলক স্পর্শ করতে চলেছে মাঝ নভেম্বরে।
এমনিতেই বিশ্বজুড়ে অভাব আর অসমতায় যতি টানা যাচ্ছে না; দ্বন্দ্ব-সংঘাতে উদ্বাস্তু ও অভিবাসন সংকট দিন দিন বাড়ছে। জলবায়ু ঝুঁকি আরও বড় বিপদের সংকেত দিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে মানুষ আরও বাড়লে এ গ্রহে কী ঘটবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৮০০০০০০০০০ সংখ্যাটি বিশাল বটে, দুশ্চিন্তাগুলোও অমূলক নয়। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়াই মঙ্গলজনক। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
জাতিসংঘ বিষয়টিকে উদযাপনের উপলক্ষ হিসেবে দেখার পরামর্শ দিয়ে বলেছে, “মানব ইতিহাসের এক যুগান্তকারী মুহূর্তে উপস্থিত আমাদের এই পৃথিবী। আগামী ১৫ নভেম্বর এই গ্রহের মোট জনসংখ্যা ৮০০ কোটিতে পৌঁছাবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগান্তকারী সব উদ্ভাবনের কল্যাণে আজ আমরা দীর্ঘ আয়ু পেয়েছি, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করছি।”
বিশ্ব মানব পরিবারের জনসংখ্যা ১০০ কোটি থেকে ২০০ কোটি হতে লেগেছে ১২৫ বছর। আর এই জনসংখ্যা ৭০০ কোটি থেকে ৮০০ কোটি হতে চলেছে মাত্র ১২ বছরে।
এ বছরের শুরুতে ইউনাইটেড নেশনস ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড স্যোশাল অ্যাফেয়ার্সের (ইউএনডিইএসএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক দশকে জন্মহার কমে গেলেও বিশ্বের জনসংখ্যা ২০৩৭ সালে ৯০০ কোটি এবং ২০৫৮ সালে ১ হাজার কোটির মাইলফলকে পৌঁছাতে পারে।
ওই সংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষের বসবাস হবে আটটি দেশে। ডিআর কঙ্গো, মিশর, ইথিওপিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স এবং তানজানিয়ায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে বলে মনে হলেও এর হার আসলে কমছে।
জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী এ বছরই চীনকে পেছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হতে চলেছে ভারত।
আর ইউএনডিইএসএ এর জনসংখ্যা বিভাগ বলছে, চীনের ১৪০ কোটি জনসংখ্যা কমতে কমতে ২০৫০ সালের মধ্যে ১৩০ কোটিতে নেমে আসতে পারে।
১৯৯০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেড়েছে নয় বছর। বর্তমান গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৮ বছর থেকে ২০৫০ সালে নাগাদ বেড়ে ৭৭ দশমিক ২ বছর হতে পারে।
১৯৫০ সালের তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি এখন কম। ২০২০ সালে প্রজনন হার কমায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ শতাংশের নিচে ছিল।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “এ বছরের বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস একটি মাইলফলক বছরে পড়েছে। এটা আমাদের বৈচিত্র্য উদযাপন করার, মানবতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং স্বাস্থ্যে চমৎকার অগ্রগতি উদযাপনের উপলক্ষ; যা গড় আয়ু বাড়িয়েছে, মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছে।”
আতঙ্ক নয়
ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ডের (ইউএনএফপিএ) নির্বাহী পরিচালক ডা. নাতালিয়া কানেম জনসংখ্যা নিয়ে ভীত না হয়ে নারী-শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি নজর বাড়াতে সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
“এই মুহূর্তটি সবাই উদযাপন করতে পারবে না, সেটা আমি বুঝতে পারি। কেউ কেউ উদ্বেগে আছেন, আমাদের পৃথিবীতে জনসংখ্যা তো অত্যধিক। সেই তুলনায় জীবন বাঁচানোর রসদ তো অপর্যাপ্ত। তবে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, মানুষের এই সংখ্যা আতঙ্কের কারণ হওয়া উচিত নয়।”
তার যুক্তি, অতীতে বিভিন্ন দেশ বিভিন্নভাবে জনসংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধির প্রবণতা পাল্টে দিতে চেয়েছে। কখনও কঠোর এক সন্তান নীতি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, কখনও আবার পরিবার পরিকল্পনা বা গর্ভপাতে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। সেসব নীতির কোনোটাই মূল উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারেনি, বরং তার ফল হয়েছে বিপজ্জনক।
“ফের আমরা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন হতে দিতে পারি না… তেমন কিছু করতে পারি না, যেখানে একজন নারী কখন গর্ভধারণ করবেন বা আদৌ গর্ভধারণ করবেন কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়। আমাদের যেখানে নজর দেওয়া উচিত, সেখান থেকে আমাদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারে এই জনসংখ্যা আতঙ্ক।”
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মানুষের সংখ্যায় অত মনোযোগ না দিয়ে মনোযোগটা দেওয়া দরকার মানুষের ওপর।
“যে পৃথিবী আমরা গড়তে চাই, সেখানে ৮০০ কোটি মানুষ মানে ৮০০ কোটি সুযোগ তৈরির সম্ভানা, যারা মর্যাদার সঙ্গে পরিপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ পাবে।”