মানব বিষ্ঠা ও মূত্রের তৈরি সার কৃষি খাতে ব্যবহারে নিরাপদ হওয়ার পাশাপাশি কিছু সংখ্যক দেশে বিদ্যমান কৃত্রিম সারের এক চতুর্থাংশ প্রতিস্থাপনের ‘বিশাল সম্ভাবনা’ রয়েছে– এমনই উঠে এসেছে গবেষণায়।
ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের ধাক্কা, জলবায়ু পরিবর্তন আর ক্রমশ বাড়তে থাকা সারের খরচ, এই সবকয়টি চাপ কৃষকদের সামলাতে হচ্ছে বলে উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
গবেষকরা রাবার, পোকামাকড় নিরোধক ও ফার্মাসিউটিকাল’সহ তিনশ ১০ ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য মানব বর্জ্যে খুঁজে কেবল সাড়ে ছয় শতাংশের উপস্থিতি পেয়েছেন। তা-ও অনেক কম হারে আছে এগুলো।
বিজ্ঞানীরা বলেন, পরীক্ষিত মানব বর্জ্যে অল্প মাত্রায় ব্যথানাশক ‘আইবুপ্রোফেন’ ও মেজাজ স্থিতিশীল করার ঔষধ ‘কার্বামাজেপাইনের উপস্থিতি মিলেছে। তবে, এগুলোর মাত্রা এতটাই কম যে কারও একটি বড়ির সমান ডোজ জমতে পাচ লাখের বেশি বাঁধাকপির মাথা খেতে হবে।
এই গবেষণার লেখক ও জার্মানির স্টুটগার্ট শহরের ‘ইউনিভার্সিটি অফ হোহেনহেইম’-এর শিক্ষার্থী ফ্রানজিসকা হাফনার বলেন, মানব মল ও মূত্র থেকে ‘কার্যকর ও নিরাপদ নাইট্রোজেন সার’ তৈরি সম্ভব। আর এতে ‘প্যাথোজেন বা ফার্মাসিউটিকাল সংক্রমণের কোনো ঝুঁকি মেলেনি’।
জার্মানির বিশেষজ্ঞদের এই গবেষণা এরইমধ্যে মানব মূত্র থেকে তৈরি আধুনিক পণ্যগুলোর দিকে নজর দিয়েছে, যেগুলো পরবর্তীতে অ্যামোনিয়াম ও নাইট্রেটে পরিণত হয়েছে।
এর মধ্যে আছে ‘অরিন’ নামে পরিচিত এক রাসায়নিক দ্রব্য। সম্প্রতি এটি সুইজারল্যান্ড, লিচেনস্টাইন ও অস্ট্রিয়ার কৃষি খাতে ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে। চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে ভবিষ্যৎ ঘাঁটির জন্য ময়লা পানি পুনর্ব্যবহারের উদ্দেশ্যে চলমান ‘কমবাইন্ড রিজেনারেটিভ অরগানিক ফুড প্রোডাকশন’ বা ‘ক্রপ’ নামে পরিচিত মহাকাশ প্রকল্পের অংশ হিসেবেও কাজ করছে এটি।
এই গবেষণার মূল লেখক ও জার্মানির গবেষণা সংস্থা ‘লাইবনিজ ইনস্টিটিউট অব ভেজিটেবল অ্যান্ড অর্নামেন্টাল ক্রপস’-এর বিজ্ঞানী ড. আরিয়েন ক্রস বলেন, সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি এর মান-নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, জার্মানির প্রচলিত কৃত্রিম খনিজ সারের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত মানব বিষ্ঠা ও মূত্র থেকে তৈরি পুনর্ব্যবহারযোগ্য সারের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে।
“খাদ্য হিসেবে গবাদি পশু ও ফসল চাষ কমে আসা সম্পর্কিত কৃষি খাতে পরিবর্তনের কারণে, এই খাতে তুলনামূলক কম কৃত্রিম সার প্রয়োজন পড়বে। এর ফলে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারও কমে আসবে।”
“আমাদের গবেষণার ফলাফল দেখাচ্ছে, অরিন ও ক্রপের মতো প্রকল্পের কৃষি সার হিসাবে এই নাইট্রিফাইড ইউরিন সার ব্যবহারের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
আর এই গবেষণা ভবিষ্যতে এইসব পুনর্ব্যবহৃত পণ্যের বৃহত্তর ব্যবহারের যুক্তি দেখাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে স্কাই নিউজ।
রেকর্ড-ভাঙা খাদ্য মূল্যস্ফীতির সময়েই ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স’ নামের জার্নালে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
উচ্চমূল্যের সারের কারণে চাষাবাদের খরচ বেড়ে গেলে গোটা বিশ্বে ১০ কোটি অতিরিক্ত মানুষ অনাহারে কাটাতে পারেন বলে গত সপ্তাহেই এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সারের দাম বেড়ে গেলে এটি খাদ্য নিরাপত্তায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে। আর অপুষ্টির কারণে মারা যেতে পারেন আরও ১০ লাখ মানুষ।
কৃত্রিম সার তৈরি হয় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে। আর বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনে ভূমিকা রাখায় এগুলো পরিবেশের জন্যেও ক্ষতিকর হতে পারে।