খুলনা থেকে অন্তর্ধানের ঘটনায় আলোচিত রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান দাবি করেছেন, তার মা আবারও নিখোঁজ হয়েছেন। তবে রহিমার আরেক মেয়ে আদুরি আক্তার বলছেন, মা তার জিম্মাতেই আছেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
৫৫ বছর বয়সী রহিমাকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর থেকে উদ্ধারের পর খুলনা থেকে ময়িরম নিয়ে এসেছিলেন ঢাকায় তার কাছে।
ঢাকায় থাকা মরিয়ম মান্নান সোমবার বিকালে ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তখন সব ভাই-বোনদের সিদ্ধান্তে মা ও আদুরীকে নিয়ে আমি ঢাকায় আসি।”
গত ১ অক্টোবর মা-বোন খুলনায় গিয়েছিলেন জানিয়ে মরিয়ম বলেন, তারা খুলনা নগরীর বয়রা এলাকায় তার আরেক বোনের সঙ্গে থাকছিলেন।
“সেখান থেকে তিনি (রহিমা) দুদিন আগে চলে গেছেন। আজ আদুরি আমাকে ফোনে জানিয়েছে।”
তবে এবার আর মাকে খুঁজবেন না বলে জানান আগের বার মায়ের অপহরণের অভিযোগ তুলে সমালোচনায় পড়া মরিয়ম।
এদিকে খুলনায় থাকা আদুরি ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, মরিয়মের কথা ‘সত্য নয়’।
“কে বলেছে মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? মা আমার জিম্মাতেই আছেন।”
তবে কোথায় অবস্থান করছেন, তা জানাতে রাজি হননি আদুরি।
তিনি দাবি করেন, মায়ের ফের নিখোঁজ হওয়ার কোনো কথা তিনি বোন মরিয়মকে বলেননি।
আদুরির এ বক্তব্যের পর মরিয়মের সঙ্গে আবারও যোগাযোগের চেষ্টা করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। তবে তিনি ফোন ধরেননি।
যোগাযোগ করা যায়নি রহিমার ছেলে মিরাজ আল সাদীর সঙ্গেও; যিনি সোমবার বিকালে তার মায়ের আগের অন্তর্ধাণের বিষয়ে খুলনা মহানগর হাকিম মো. সরোয়ার আহম্মেদের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই খুলনার এসপি সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, “রহিমা বেগমকে তার মেয়ে ও মামলার বাদী আদুরির জিম্মায় দিয়েছিলেন আদালত। ফলে তিনি কোথায় আছেন, তা আমাদের দেখার বিষয় নয়।”
সাদীর আদালতে জবানবন্দির বিষয়ে তিনি বলেন, “তিনি আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তার মা রহিমা বেগম স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেন। এ মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা কেউ অপহরণ করেনি। গত ২৭ অগাস্ট তার মা ‘নিখোঁজ’ হওয়ার খবর শুনে তিনি গিয়ে প্রতিপক্ষের লোকদের এলাকাতেই দেখতে পান।”
খুলনার মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে গত ২৭ অগাস্ট নিখোঁজ হন ৫৫ বছর বয়সী রহিমা বেগম। সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজেও তার সন্ধান পায়নি বাড়ির লোকজন। রাতে রহিমার ছেলে মিরাজ আল সাদী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে রহিমার মেয়ে আদুরি অপহরণের মামলা করেন। আদালত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পুলিশের ওই ইউনিট।
রহিমার সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করাসহ তার মেয়েদের দৌড়ঝাঁপ অনেককে স্পর্শ করে।
নিখোঁজের ২৯ দিন পর রহিমাকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
পরের দিন আদালতে হাজির করা হলে অপহরণের দাবি করে জবানবন্দি দেন রহিমা। এরপর আদুরির জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয় আদালত।
পরে মরিয়ম বলেন, তার মা অপহৃত হয়েছেন বলে শুরুতে তিনি মনে করলেও তার ধারণা পাল্টেছে। তিনি এখন মনে করছেন, স্বেচ্ছায়ই চলে গিয়েছিলেন তার মা।