মানসিক চাপের ওপর প্রভাব রাখে কর্টিসল হরমোন। আর এই হরমোনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে কিছু খাবার।
ক্রমাগত কর্টিসল হরমোনের বৃদ্ধি মানবদেহে হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। তবে এই হরমোন আসলে ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বেটার দ্যান ডায়েটিং ডটকম’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পুষ্টিবিদ বনি টাউব-ডিক্স বলেন, “মা্নসিক চাপ, ‘ট্রমার’ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, প্রদাহ ও চাপযুক্ত পরিস্থিতি খাপ খাওয়াতে কর্টিসোল গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তবে দীর্ঘমেয়াদে কর্টিসোলের মাত্রা বৃদ্ধি রক্তচাপ বাড়ায়, রক্তের শর্করার মাত্রায় এবং ঘুমচক্রের ওপর প্রভাব রাখে।”
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে প্রাথমিক অবস্থায় শারীরিক চাপ কমনোর চেষ্টা করতে হবে।
এই ক্ষেত্রে পরামর্শ দিতে গিয়ে একই প্রতিবেদনে ওয়াশিংটনের পুষ্টিবিদ মিশেল ব্যাব বলেন, “পর্যাপ্ত ঘুম দেহের চাপ কমায়। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ কমাতে কর্মক্ষম থাকা বা শরীরচর্চা উপকারী।”
আর কর্টিসোলের মাত্রা কমাতে আরেকটি উপায় হল নিয়মিত প্রকৃত খাবার গ্রহণ করে দেহে সুষম পুষ্টি সরবারহ করা।
ব্যাব বলেন “এতে জটিল কার্বোহাইড্রেইট, সবজি, ফল, মটর, শস্য, জলপাই, জলপাইয়ের তেল, অ্যাভাকাডো, বাদাম, বীজ থেকে স্বাস্থ্যকর চর্বি, সামদ্রিক খাবার, খাঁটি সয়া, ডিম, ভেষজ পল্ট্রি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।”
কীভাবে খাওয়া হচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
অমনযোগিতার মাত্রা কমানো, শ্বাস নেওয়া, আরাম করা, ইন্দ্রিয়কে ব্যস্ত রাখা এবং সবশেষে উপভোগ করা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, বলে জানান তিনি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
কর্টিসল কমানোর খাবার
ক্যালিফোর্নিয়ার ‘হার্বালাইফ নিউট্রিশন’য়ের স্পোর্টস পারফর্মেন্স, নিউট্রিশন ও ওয়েলনেস’ পরিচালক ডানা রায়ান বলেন, “এমন কোনো খাবার নেই যা তাৎক্ষনিকভাবে দেহের কর্টিসোলের মাত্রা কমাতে পারে। তবে, নিয়মিত প্রদাহরোধী খাবার খাওয়া দীর্ঘমেয়াদে উপকার পেতে সহায়তা করে।”
তিনি আরও বলেন, “অতিরিক্ত, স্বাস্থ্যকর মাইক্রোবায়োম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া কর্টিসোলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।”
নিচের খাবারগুলো নিয়মিত খাওয়া কর্টিসোলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
স্যামন: “স্যামন এবং চর্বিবহুল সামদ্রিক খাবার, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস। যা প্রদাহ কমায়, হৃদস্বাস্থ্য ও মন মেজাজ ভালো রাখতে সহায়তা করে বলেন”, টাব-ডিক্স।
কাঠ বাদাম: টাব-ডিক্স বলেন, “কাঠবাদাম উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ভালো উৎস। এটা কোলেস্টেরল কমাতে এবং গ্লুকোজের মাত্রা স্থিতিশীল করতে সহায়তা করে। মচমচে বাদাম সকালের নাস্তার ওপরে, সালাদে বা সামুদ্রিক খাবারের ওপরে দিয়ে পরিবেশন করে খাওয়া যায়।”
তিনি বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেন কারণ এটা উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ এবং এর ম্যাগনেসিয়াম আরামদায়ক অনুভূতি দেয়।
পানি: ডা. ডানা রায়ান বলেন, “শুনতে সাধারণ মনে হলেও এটাই সত্যি যে পানি শূন্যতা রোধ করা কর্টিসোলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার চাবিকাঠি। তাই সারাদিন ধরে নিয়মিত পানি পান করতে ভুলবেন না।”
দই: রায়ান বলেন, “উচ্চ প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, যা অন্ত্র সুস্থ রাখতে উপকারী। যে কারণে কর্টিসোলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।”
ভেষজ চা: রায়ানের মতে, “চা যেমন- ‘ক্যামোমাইল টি’ ঘুম উন্নত করতে সহায়তা করে। কর্টিসোলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি।”
উচ্চ ইনুলিন (এক জাতীয় আঁশ) সমৃদ্ধ খাবার: এক ধরনের প্রিবায়োটিক, যা হজম হয় না বা দেহে শোষিত হয় না। বরং অন্ত্রে থেকে যেয়ে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া জন্মাতে সহায়তা করে।
উন্নত ইনুলিন ধরনের খাবার হল- কলা, রসুন, পেঁয়াজ কালি। এই খাবারগুলো রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে, জানান ব্যাব।
ভেষজ: তুলসি, অশ্বগন্ধা, ল্যাভেন্ডার ও জিংসেং’য়ের মতো ভেষজ, মানসিক চাপ কমায় এবং আরাম অনূভবে সহায়তা করে।