ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সাইকেলে কলকাতা থেকে ঢাকায়


এফই অনলাইন ডেস্ক | Published: February 21, 2023 18:47:44 | Updated: February 21, 2023 22:55:42


ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সাইকেলে কলকাতা থেকে ঢাকায়

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কলকাতা থেকে ৫০০ কিলোমিটার পথ সাইকেলে চড়ে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসেছেন ভারতীয় একদল নাগরিক।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হুগলীর চন্দননগর থেকে সাইকেলে করে রওনা দেয় আট জনের দলটি। সোমবার ঢাকায় এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নেন তারা।

মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায় তাদের। কথা হলে তারা জানান, কলতাকায়ও ছোট পরিসরে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। তবে যেখানে ভাষা সৈনিকরা শহীদ হয়েছেন, সেখানে এসে শ্রদ্ধা জানানোর অনুভূতি অন্যরকম।

এই দলের সদস্য শৈবাল ব্যানার্জি পেশায় একজন শিক্ষক। তিনি বলেন, বাংলাদেশই সেই দেশ, যে দেশের মানুষ ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

“এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সালাম, বরকত, জাব্বারসহ অনেকে জীবন দিয়েছেন। একুশে ফেব্রুয়ারি অনেক বেশি পাওয়ার, অনেক বেশি দেওয়ার।

“বাংলাদেশে কেন্দ্রীয়ভাবে ভাষা নিয়ে যে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান, ভাষা নিয়ে যে উন্মাদনা, তা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করা অনেক গর্বের। তাই আমরা কাঁটাতারের ব্যবধান মুছে ৫০০ কিলোমিটার সাইকেলে চড়ে এখানে এসেছি।”

শৈবাল বলেন, “বাংলা ভাষাভাষী যে অঞ্চলেই থাকুক, আমরা পশ্চিম বাংলা কিংবা পূর্ব বাংলা অথবা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তেই থাকি না কেন, আমাদের শেকড় এই বাংলা ভাষা। আর এই ভাষার অধিকার যারা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তাদের তো শ্রদ্ধা জানাতেই হয়।”

তার ভাষায়, “আমাদের দুই বাংলার মধ্যে মেলবন্ধন রয়েছে। কাঁটাতারর ছাড়া আমাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমাদের ভাষা এক, খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা, আচার-আচরণ এক। কাঁটাতারের ব্যবধান মুছে দুই বাংলা এক সাথে এগিয়ে চলুক এবং বাংলা ভাষা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষাগুলো মধ্যে জীবন্ত থাকুক, সেই প্রত্যাশা আমাদের।”

এই দলে অন্যদের মধ্যে আছেন শৈবাল ব্যানার্জি স্ত্রী মহুয়া ব্যানার্জি, অঞ্জন দাশ, শ্রীকান্ত মণ্ডল, প্রসেনজিৎ সরকার, প্রণব মাইতি, সত্যব্রত ভাণ্ডারী ও রমজান আলী।

এদিকে থ্যালেসেমিয়া মুক্ত বিশ্ব গড়ার ক্যাম্পেইন নিয়ে কলকাতা থেকে পায়ে হেঁটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন আরেক ভারতীয় নাগরিক আলমগীর খান।

তিনি জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার বারাসাত থেকে শুরু হয় তার পদযাত্রা। পথে পথে তিনি থ্যালেসেমিয়ামুক্ত বিশ্ব গড়তে এবং প্রত্যেক বাড়িতে রক্তদাতা তৈরি করতে প্রচার চালান।

আলমগীর বলেন, থ্যালেসেমিয়া এমন এক রোগ, যে রোগ আস্তে আস্তে বাংলাদেশ-ভারতে মারাত্মক আকার নিচ্ছে।

“এটা নিয়ে এখনই যদি আমরা না ভাবি, তাহলে আগামীতে এটা মহামারী আকার নেবে। কারণ প্রত্যেক দশ জন বাচ্চায় একজন থ্যালেসেমিয়া আক্রান্ত হবে।”

ভারতীয় নাগরিক আলমগীর খান কলকাতা থেকে পায়ে হেঁটে বাংলাদেশে এসেছেন থ্যালেসেমিয়া মুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রচারাভিযানে।

তিনি বলেন, “বিয়ের আগে প্রত্যেকের পরীক্ষা করা দরকার, তারা থ্যালেসেমিয়ার বাহক কি না। যদি দুজনের মধ্যে বাহক থাকে, আমি বলব তারা যেন বিয়ে না করেন। যদি বিয়ে করেন, তাহলে বাচ্চার থ্যালেসিমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।”

পিঠের ব্যাগে সযত্নে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা ও ভারতের পতাকা পরম শ্রদ্ধাভরে বহন করছেন আলমগীর।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। বাঙালি মানে এক সত্তা, এক জাতি। কেবলই সীমান্ত আমাদের পৃথক করে রেখেছে। বাংলাদেশের মানুষের ব্যবহারে আমি মুগ্ধ।

 “২১ ফেব্রুয়ারি যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস- এটার কৃতিত্ব বাংলাদেশের মানুষের। বাঙালি হিসেবে এই দিনটাতে এখানে থাকতে পারাটা আমার জন্য গর্বের।”

Share if you like