এক মহামারী পেরিয়ে আসা পৃথিবীতে মানুষের শান্তি কেড়ে নিচ্ছে যুদ্ধ; সেই যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের শান্তি-সমৃদ্ধি কামনায় যিশুর আগমনী দিন উদযাপন করছে দেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়।
রোববার বড়দিনের সকালে কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথিড্রালের প্রার্থনাসভায় ফাদার প্যাট্রিক গমেজ বলেন, নিখাঁদ ভালোবাসাই পারে এ জগত বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে আনতে, শান্তি বজায় রাখতে।
বড়দিন রোববার হলেও উদযাপন শুরু হয়েছে আগের রাত থেকেই। খ্রিস্টানদের বাড়ি বাড়ি চলছে উৎসব। অভিজাত হোটেলগুলোতেও রয়েছে বিশেষ আয়োজন।
মহাখালীর লুর্দের রানীর গির্জা, লক্ষ্মীবাজারের ক্রুশ ধর্মপল্লী, মোহাম্মদপুরের সেন্ট ক্রিস্টিনা গির্জা, মিরপুর-২ এর মিরপুর ক্যাথলিক গির্জা, কাফরুলের সেন্ট লরেন্স চার্চগুলো বড়দিন উপলক্ষে সেজেছে। ক্রিসমাস ট্রি থেকে ঝুলছে আলোর মালা। বানানো হয়েছে খ্রিস্টের জন্মের ঘটনার প্রতীক গোশালা। সেই সঙ্গে বড় দিনের কেক তো আছেই।
খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারক যিশু খ্রিস্টের জন্মকাহিনি বড়দিনের উৎসবের মূলভিত্তি। ২৫ ডিসেম্বর বেথলেহেম শহরে কোনো এক আস্তাবলে কুমারী মাতা মেরির গর্ভে জন্ম নেন যিশু।
ফাদার প্যাট্রিক গমেজ বলেন, “আমরা এমন এক দিন বড়দিন উদযাপন করছি, যখন ইউক্রেইনে যুদ্ধ চলছে। বিশ্বের অনেক জায়গায় হানাহানি চলছে। এ সমস্ত দেশে যেন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে মানুষ যেন সম্পূর্ণ মুক্ত হয়; এই উদ্দেশ্যে আসুন আমরা প্রভূর কাছে প্রার্থনা করি।”
প্রার্থনায় তিনি বলেন, “স্বামী-স্ত্রীর নিখাঁদ ভালোবাসাই হল বড়দিন, সবার প্রতি সবার ভালোবাসাই হল বড়দিন। দুঃস্থ মানুষের পাশে থাকাই হল বড়দিন। বিশ্বব্যাপী সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি হোক। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোর মানুষের শান্তি বজায় থাকুক।”
শনিবার রাতে বিভিন্ন গির্জা ও উপাসনালয়ে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বড় দিনের আনুষ্ঠানিকতা। মঙ্গলবাণী পাঠের মাধ্যমে নিজের পরিশুদ্ধি এবং জগতের সব মানুষের জন্য মঙ্গল কামনা করা হয়।
রোববার সকালে কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথিড্রালের পাশাপাশি থেকেই বিভিন্ন চার্চ, বাড়ি এবং হোটেলগুলোতে বড় দিনের প্রার্থনার আয়োজন হয়।
বড় হোটেলগুলোও বড় দিনে আলাদা আয়োজন করেছে। শিশুদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের খেলার আয়োজন। প্রধান আকর্ষণ হিসেবে ‘সান্তাক্লজ’ আসবেন নানা উপহার ও চমক নিয়ে।
দুই হাজার বছরের বেশি সময় আগে খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশু ২৫ ডিসেম্বর ইসরাইলের বেথলেহেম শহরে জন্ম নেন। সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার ও মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করার জন্য ঈশ্বর যিশুকে মানবরূপে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন বলে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, “জাগতিক সুখের পরিবর্তে যীশুখ্রিষ্ট ত্যাগ, সংযম ও দানের মাধ্যমে পারমার্থিক সুখ অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য স্থাপনসহ অশান্ত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যীশুখ্রিষ্টের শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণীয়।”
বাংলাদেশ যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, সে কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, “আবহমানকাল থেকে এদেশে সব ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠানাদি স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে।”
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ‘সকল শ্রেণি-পেশা, সম্প্রদায়ের জনগণের উন্নয়নই’ সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে তার সরকার সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
“আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি- ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আওয়ামী লীগ সরকার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর।”
বড়দিন উপলক্ষে রোববার সরকারি ছুটি। উৎসব নির্বিঘ্ন করতে গির্জগুলোতে একাধিক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। নিরাপত্তার এই আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ফাদার প্যাট্রিক গমেজ।
তিনি বলেন, “এ বছর সরকার অনেক সহযোগিতা করেছে, অনেক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এর আগে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, সারাদেশে ৫ হাজার ৬৪২টি গির্জায় বড়দিন উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গির্জার প্রবেশপথে আর্চওয়ে বসানোর পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা রাখা হয়েছে নজরদারির জন্য। বড়দিনে আতশবাজি, পটকা ফাটানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ রোববার সকালে ফাদার পাট্রিক গোমেজকে ফুল ও কেক দিয়ে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানান।