সুলতান হাসানাল আল বলকিয়াহর সফরে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বাণিজ্য বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ ও ব্রুনেই।
এক্ষেত্রে ব্রু্নেই বাংলাদেশ থেকে হালাল মাংস, মাছ পেতে চাইছে; আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ দেশটির কাছ থেকে জ্বালানি পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ।
ব্রুনেইর সুলতানের সফরের দ্বিতীয় দিনে রোববার বিকালে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। এতে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
দুই সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু, জনশক্তি রপ্তানি, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম সরবরাহে সহযোগিতা বাড়াতে ব্রুনেই দারুসসালামের সঙ্গে একটি চুক্তি ও তিনটি সমঝোতা স্মারকে সই করে বাংলাদেশ।
সুলতান হাসানাল বলকিয়াহর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একান্তেও বৈঠক করেন।
পরে সংবাদ সম্মেলনে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “একটি জিনিস আজকে প্রস্তাব করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বলেছেন ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট বাড়ানোর জন্য।”
ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী সমন্বিতভাবে কাজ করবেন। এজন্য আলোচনা চালু রাখতেও বলেন প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে যৌথ পরামর্শক কমিশন গঠনের আলোচনাও হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ব্রুনেইয়ের সুলতান বাংলাদেশ থেকে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, কৃষি ও মৎস্যপণ্য, হালাল মাংস নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশের গোট (ছাগল), বেঙ্গল গোট উনার খুব পছন্দ। আমরা উনার সাথে যাওয়ার সময় কিছু বেঙ্গল গোট জীবিতভাবে দিয়ে দেব। আসার পর থেকেই উনাদেরকে আমাদের গোটের কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়াচ্ছি।”
বাংলাদেশের চাহিদা নিয়ে মোমেন বলেন, “আমরা উনাদের বলেছি, আমাদের জ্বালানির চাহিদা রয়েছে। সুলতান বলেছেন, চাহিদা অনুযায়ী তারা বাংলাদেশকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করবেন।”
ব্রুনেই থেকে বাংলাদেশে ‘তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহে’ একটি সমঝোতা স্মারক সই হয় এদিন।
ধনী দেশ ব্রুনেইয়ে জনশক্তি পাঠানোর কথাও সুলতানের সঙ্গে বৈঠকে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে কৃষি ও মৎস্য, সেবা প্রদান ক্ষেত্র, তথ্য ও প্রযুক্তি পেশাদারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যন্ত মেধাবী কর্মী রয়েছে। ব্রুনাইয়ের জনশক্তি চাহিদা পূরণে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
বাংলাদেশের সরকারের গড়ে তোলা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে ব্রুনেইকে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
আলোচনায় রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টিও আসে। শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে থাকা একজন রোহিঙ্গাকেও যে মিয়ানমার ফেরত নেয়নি, তা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানে ব্রুনেই যেমন রয়েছে, মিয়ানমারও রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “এক সময় ব্রুনেই আসিয়ানের রোহিঙ্গা বিষয়ে স্পেশাল এনভয় ছিলেন। তারা এটা (প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়া) নিয়ে খুব কষ্ট পেয়েছেন এবং দুঃখ পেয়েছেন বলে জানান।”
রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘে শেখ হাসিনার উত্থাপিত পাঁচ দফা প্রস্তাব আসিয়ান দেখছে বলেও বৈঠকে জানান সুলতান বলকিয়াহ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আসিয়ান সেক্টরাল ডায়লগের অংশীদার হতে বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সম্মতি জানান ব্রুনেইয়ের সুলতান।”
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ ও ব্রুনেই একত্রে কাজ করে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, দুই দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ক্ষেত্রেও এক সঙ্গে কাজ করতে চায়। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থায় বাংলাদেশকে ব্রুনেইর সমর্থন দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা শুধু আগে পশ্চিমের (দেশগুলোর) দিকে তাকাতাম। এখন আমাদের পূর্ব দিকেও তাকানো উচিৎ। আমাদের আশপাশেও তাকানো উচিৎ।”
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যে এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বৈঠকে তা নিয়ে একমত হন দুই নেতা।
সুলতান বলকিয়াহ কোভিড মহামারী মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সি প্রশংসা করেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।
তিনি বলেন, ব্রুনেইয়ের সুলতান বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করায় তার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং নিজের পক্ষ থেকে সুলতানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
ব্রুনাইয়ের সুলতানের রোববার রাতে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি সোমবার সকালে রওনা হবেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও উপস্থিত ছিলেন।