টেকসই অর্থনীতি গড়তে ব্যাংক খাতে সংস্কারের পাশাপাশি অপচয় বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ।
একই সঙ্গে তিনি ব্যাংকারদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, “রাজনীতিবিদদের মতো দেখছি, দেখব- এ জাতীয় বক্তব্য ব্যাংকারদের হতে পারে না। বরং বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে বলতে হবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নিব।”
শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ব্যাংকিং অ্যালমানাক এর চতুর্থ প্রকাশনীর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে সংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, “এক বছরের বেশি সময় ধরে একটি ব্যাংকের নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
“পত্রিকায় ব্যাংকারদের বক্তব্য যেভাবে আসছে তাতে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে। আমাদের আরেকটু দ্রুত, দৃশ্যমান ও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।”
ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিতেও জোর দেন সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। এজন্য তথ্যের অবাধ প্রবাহের কথা বলেন তিনি।
তথ্য প্রবাহের পাশাপাশি শুধু পরিসংখ্যানভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে সালেহউদ্দিন বলেন, তথ্য অবশ্যই থাকতে হবে। তথ্যর সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার আলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যা জনবান্ধব হয়।
“শুধু পরিসংখ্যানের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। কারণ হচ্ছে, পরিসংখ্যান যেভাবে আসে, তা সবসময় গুণগত মানের হয় না।”
মুদ্রানীতির সামনের চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে সাবেক এ গভর্নর বলেন, “বর্তমান বিশ্বেরও চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। এটি কমিয়ে আনতেও কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। ব্যাংকিং খাতের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শুধু নিয়মতান্ত্রিক কাজ করলে তা হবে না।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ঘরে ঘরে নতুন চাল থাকায় কমে আসছে মূল্যস্ফীতি, তবে তা আরও কম হলে ভালো হত।
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের ধাক্কায় সেই চাপ সামলাতে গিয়ে মূল্যস্ফীতি হার ‘একস্থানে ধরে রাখা’ যাচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অর্থনীতি আনহেলদি নয়, গ্রোইং অর্থনীতির দেশ আমরা। একটু সাপ্রেসড হয়ে ডাইভার্টেড হয়েছে। একারণে মূল্যস্ফীতির তাপ একটু বেশি। কিন্তু সেই তাপ কমে আসলে, আমি বলে দেই তাপ কমেছে।”
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নীতিমালা তৈরির প্রক্রিয়াতে জবাবদিহিতা থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অর্থনীতি নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় সঠিক চিত্র উঠে আসছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সব আলোচনার আগে ‘প্রকৃত’ শব্দটি যোগ করার প্রয়োজন। ব্যাংকিংয়ের কথা বলি, প্রবৃদ্ধির কথা বলি, দারিদ্রের কথা বলি-প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এখন ‘প্রকৃত’ শব্দটা জরুরি হয়ে পড়েছে।”
ফুটপাতে ছিন্নমুল মানুষের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই চিত্র আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়েছে, প্রকৃত অবস্থা কী? এখানে অর্থনৈকি অনেক বিষয় চলে আসে। এসবের প্রকৃত অবস্থা কী, জানা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এর সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমানুল্লাহ, বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসি) সাবেক চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, ব্যাংকিং অ্যালমানাকের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ জিয়াউদ্দিন আহমেদ, প্রকল্প পরিচালক আবদার রহমান, সম্পাদকীয় পরিষদের সদস্য সাংবাদিক সালাউদ্দিন বাবলু উপস্থিত ছিলেন।