মঙ্গলে ঊষা বুধে পা যথা ইচ্ছা তথা যা
খনার বচনে এমন বলা থাকলেও বাস্তবিক অর্থে কি সব জায়গাতেই মানুষ যেতে পারে? না, পারে না। বিশ্বে এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে মানুষের যাওয়া পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই অগ্রগতির যুগে বাস করেও বেশকিছু স্থানে মানুষ আজও প্রবেশ করতে পারেনি। খানিকটা গোপনীয়তার চাদরে যেনো আড়াল হয়ে রয়েছে সেই স্থানগুলো।
দক্ষিণ কোরিয়ার রুম ৩৯
বলা হয়ে থাকে, রুম ৩৯ বিশ্বের অন্যতম গোপন সংস্থা এবং রাজধানী শহর পিয়ং ইয়াং এ অবস্থিত ওয়ার্কারস পার্টি ভবনে্র কোথাও এটি রয়েছে।
১৯৭০ সালে রুম ৩৯ এর যাত্রা শুরু হয়। এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা সম্ভব না হলেও ধারণা করা হয় যে, বৈধ ও অবৈধ-এই দুই পথেই বিভিন্ন বানিজ্যিক উদ্যোগের মাধ্যমে স্বর্ণ, মাদক ও অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে জালিয়াতি করে অর্থ সংগ্রহ করে।
বিশ্বের নানা প্রান্ত জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাদের কার্যক্রম এবং ধারণা করা হয় যে তারা প্রতি বছর দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করে।
যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় অবস্থিত কোকা-কোলার ভল্ট
কোকা-কোলার রেসিপি বা ফর্মুলা আজ পর্যন্ত গোপন রাখা হয়েছে এবং তা সংরক্ষণ করা আছে এক দুর্ভেদ্য সুরক্ষা জালের ভেতরে।
১৮৮৬ সালে জন পেম্বারটন এই ফর্মুলা আবিষ্কার করেন এবং ১৯২০ সালে সেটি নিউইয়র্ক ব্যাংকে সুরক্ষিত অবস্থায় রাখা হয়। পরবর্তীতে, ১৯২৫ সালে সেটি আটলান্টার ট্রাষ্ট কোম্পানী ব্যাংকে স্থানান্তরিত করা হয়।
২০১১ সালে কোম্পানীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাংক থেকে নিয়ে আটলান্টা মিউজিয়ামের একটি সুরক্ষিত ভল্টে কোকা-কোলার রেসিপি রাখা হয়।
ব্রাজিলের স্নেক আইল্যান্ড
ব্রাজিলের সাও পাওলো উপকূল এলাকা থেকে প্রায় ১০০ কিমি দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটি অবকাশ যাপনের জন্য খুবই চমৎকার একটি জায়গা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, দশকের পর দশক ধরে দ্বীপটি একদম জনমানবহীন অবস্থায় রয়েছে। কারণ এখানে রয়েছে সব মারাত্মক বিষধর সাপের উপস্থিতি।
এই দ্বীপের প্রতি স্কয়ার মিটার জায়গায় প্রায় এক থেকে পাঁচটি করে সাপ যেনো আস্তানা গেড়ে রয়েছে। একে সাপের রাজ্য বললে বোধকরি ভুল বলা হবে না। শুধু তাই নয় বিশ্বের সব বিষধর সাপের মিলনমেলাও বলা চলে। আর তাই ব্রাজিল সরকার জনসাধারণের জন্য স্থানটি নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে।
আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত নর্থ সেন্টিনেল
আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের এই অংশটুকু ঘন ম্যানগ্রোভ বনে আচ্ছাদিত এবং এর চারপাশ জুড়ে রয়েছে কোরাল। অনেকটা ভৌগলিক কারণেই এই স্থানটি পুরো বিশ্ব থেকে সম্পর্কহীন অবস্থায় বা বলা চলে বিচ্যুত হয়ে রয়েছে।
এখানে ‘সেন্টিলেনেজ’ নামের এক ধরনের আদিম জনগোষ্ঠী বসবাস করে যারা আধুনিক বিশ্বের ছোঁয়ার সম্পূর্ণ বাইরে রয়েছে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই জায়গায় ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ড
প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনের জন্য পর্যটকরা এলেও একটি স্থান আজও ভ্রমণের জন্য নিষিদ্ধ হিসেবে গণ্য হয়। আর তা হছে নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ড।
১৬১৪ সালের দিকে এই জায়গায় প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন রোগের আধিক্য দেখা দিয়েছিল এবং ক্রমশ তা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়।
১৮৮০ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত এই স্থানটি বিভিন্ন সংক্রামক রোগে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হতো। আর যারা এই অবস্থায় মারা যেতো তাদেরকে সেখানকার একটি মর্গে রেখে দেয়া হতো।
১৯৫১ সাল থেকে এটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
১৯৬৩ সালের দিকে এসে স্থানটির বিভিন্ন ভবন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠে এবং এই জায়গাটি পরিত্যাক্ত ও সাধারণের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
শবনম জাবীন চৌধুরী ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মেসি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।