নিজের ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বা নিজেকে আরো সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে মানুষ কতো কি না করে। দেশভেদে সেটির ধরন ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।
অন্য দেশে রূপ বাড়িয়ে তুলতে যে কাজগুলো করা হয় তা অন্য সংস্কৃতির বা অন্য দেশের মানু্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য না ই হতে পারে। মনে হতে পারে এ আবার কী অদ্ভুত কাজ!
নকল গজ দাঁত লাগানো
গজদাঁতের ব্যাপারে কম বেশি সবারই জানা আছে। দাঁতের উপর আরেকটা দাঁত নিজের সৌন্দর্য নষ্ট করে দিতে পারে সেই কথা ভেবে এটি থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই দাঁতের চিকিৎসকের কাছে ছুটে যান।
তবে জাপানে এর উলটো চিত্রটি দেখা যায়। জাপানের মেয়েরা লাখ লাখ টাকা খরচ করছে এই গজ দাঁত লাগানোর পিছনে। তাদের ধারণা গজ দাঁত তাদের চেহারাকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।
জাপানে খুব সহজেই এই নকল গজ দাঁত কিনতে পাওয়া যায়। তাই যখন খুশি এটি লাগানো এবং খুলে রাখা সম্ভব হয়। কিন্তু স্থায়ীভাবে এই নকল দাঁত লাগাতে গুণতে হয় অনেক টাকা।
রিং প্যাঁচিয়ে গলা লম্বা করা
যদি বলা হয় ইচ্ছে করেই গলায় রিং প্যাঁচিয়ে রাখার মাধ্যমে কায়েন সম্প্রদায়ের নারীরা নিজেদের গলা লম্বা করেন তাহলে? অবাক করার মতো বিষয় হলেও যুগ যুগ ধরে এমনটাই করে আসছেন এই সম্প্রদায়ের নারীরা।
কায়েন সম্প্রদায়ের নারীরা নিজেদের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ৫ বছর বয়স থেকে গলায় সোনালি রঙের রিং প্যাঁচাতে শুরু করেন। এভাবে ২১ বছর বয়স পর্যন্ত একটার পর একটা করে নতুন রিং তাদের গলায় সংযুক্ত হতে থাকে। এতে করে তাদের গলা ধীরে ধীরে সরু ও লম্বা হয়ে যায়। ২১ বছর বয়স হলে রিং গুলো তাদের গলা থেকে খুলে নেয়া হয়।
সেখানের কোনো নারী চাইলেও গলায় রিং প্যাঁচানোর হাত থেকে বাঁচতে পারবেন না কারণ শুরু থেকেই ঐতিহ্যগতভাবে এমনটাই হয়ে আসছে।
কায়েন সম্প্রদায়ের বাস থাইল্যান্ডে। প্রতি বছর এই সম্প্রদায়ের নারীদের এক নজর দেখতে হাজারো পর্যটক সেখানে ভীড় করেন। কায়েনদের কাছে এই লম্বা গলা গর্বের প্রতীক। সেখানে যে নারীর গলা যত লম্বা সে তত সুন্দরী।
জোড়া ভ্রু এর প্রতি ভালোবাসা
পশ্চিমা বিশ্বে ভ্রু এর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এর আশপাশ থেকে অবাঞ্চিত লোমগুলো উঠিয়ে ফেলা হয়। যাকে বলা হয় ভ্রু প্লাক করা।
যাদের জোড়া ভ্রু থাকে তারা মাঝখানের লোমগুলোকে উঠিয়ে ফেলেন যাতে করে ভ্রু দুটিকে স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। বাংলাদেশেও প্রায় মেয়েরাই ভ্রুর সৌন্দর্য ধরে রাখতে সেগুলোকে প্লাক করে রাখেন।
কিন্তু তাজাকিস্তানের জনগণের এই জোড়া ভ্রু এর প্রতি রয়েছে অন্যরকম ভালোবাসা। নারী ও পুরুষ উভয়েই জোড়া ভ্রু থাকাটাকে পছন্দ করেন। জন্মগত ভাবে যারা জোড়া ভ্রু এর অধিকারী হন তারা নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করে থাকেন।
কিন্তু যাদের জোড়া ভ্রু নেই তারা কী করেন? তাজাকিস্তানের নারীরা জোড়া ভ্রু এতোটা ভালোবাসেন যে নকল জোড়া ভ্রু গজানোর জন্য তারা এক ধরনের ভেষজ ঔষধ ব্যবহার করেন।
যেখানে অন্যন্য দেশের নারীরা কাজল এবং ফাউন্ডেশন দিয়ে ভ্রু গুলোকে স্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট আকার দিতে ব্যস্ত সেখানে তাজাকিস্তানের নারীরা পাতলা জোড়া ভ্রু কে কাজল দিয়ে ঘন করে অঙ্কন করে রাখেন।
যার মাধ্যমে ধারণা করা যায়, তাজাকিস্তানের নারীদের কাছে জোড়া ভ্রু সত্যিকার অর্থেই সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। আর সেটি বৃদ্ধির জন্য তারা ব্যবহার করেন কাজল কিংবা ভেষজ চিকিৎসা।
ঠোঁটে গোল প্লেট পরিধান
ঠোঁটের আকার ও আকৃতি অনুযায়ী মানুষের সৌন্দর্যের পারদ উঠানামা করে। এই ঠোঁটকে আকর্ষণীয় করে তুলতে প্লাস্টিক সার্জারী করানোর গল্প নতুন নয়। বর্তমান সময়ের নারীদের প্রায়শই নিজের পছন্দমতো ঠোঁট চিকন না মোটা করতে দেখা যায়।
নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এমনটাই করে থাকেন ইথিউপিয়াতে বসবাসরত মুরসি জাতির নারীরা।
মুরসি জাতির নারীরা বিশ্বাস করেন যে যার ঠোঁট যত বেশি লম্বা সে নারী তত বেশি সুন্দরী। ঠোঁটে প্লেট পরিধান করার বিষয়টি নারীদের বাচ্চা জন্মদানের উর্বরতা এবং বিবাহের জন্য যোগ্যতার সাথেও সংযুক্ত।
একজন মুরসি জাতির মেয়ে যখন বয়ঃসন্ধিকালে পৌছায় ঠিক তখনই প্লেট পড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কেউ যদি এটি করতে অসম্মতি জানায় তবে তাদের অলস বলে বিবেচনা করা হয়।
সৌন্দর্যের আসলে নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা হয়না। সৌন্দর্য বিষয়টি একেক জনের নিকট একেক রকম হয়ে থাকে। তাই আপাত দৃষ্টিতে বিশ্বজুড়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে করা কাজগুলো কিছুটা অদ্ভুত হলেও দিনশেষে সবাই নিজস্ব জায়গা থেকে সুন্দর ও মনোরম।
ফারজানা জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।